তীব্র পানিসংকট, মশার উপদ্রবে ভুগছে মানুষ

  • ৫ নম্বর ওয়ার্ডে খাওয়ার ও ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট। তেমনি আছে মশার উপদ্রব।

  • ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এলাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাটখোলার রাস্তা বেহাল হওয়ার কারণে।

  • মোহাম্মদপুর ও আমানতগঞ্জ খাল দখলমুক্ত করে খননের দাবি নাগরিকদের।

বরিশাল নগরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের গৃহস্থালি ও গোসলের কাজে পানির জোগান দেয় মোহাম্মদপুর খালটি। কিন্তু দখল-দূষণে খালটি বেহাল। গত বুধবার
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম (৬৪)। গত বুধবার দুপুরে তপ্ত রোদ আর খরতাপে স্বামীর রিকশা-সাইকেল হাওয়া দেওয়ার দোকানে বসে ছিলেন। এলাকায় পানির কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘মোগে কষ্টের কতা কি হোনবেন। খাওনের পানি আনি ওই যে মসজিদ দ্যাহেন না হেইহান দিয়া। যে পানি দিয়া মসজিদে ওজু করে, হেই পানি আইন্না মোরা খাই। মোগো গোসল, সোংসারের দিনের কাজবাজের পানির জোগান দেয় ওই খাল। কিন্তু খালে কোনো দিন পানি আয়, কোনো দিন আয় না। যেইডুক আয়, হ্যাতে ডুব দেওন যায় না। আবার পানি খুব নোংরা। এইহানের সবাইর পায়খানার লাইন খালের লগে। পানির যে কী কষ্ট, মোগো হেইয়্যা বুঝাইতে পারমু না।’

এ সময় সেখানে উপস্থিত হন মনোয়ারা বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম এ আলাপে যোগ দিয়ে বলেন, ‘মোগো কতা ভাবনের কেউ কি আছে! খালি যহন ভোট লাগে, হেই সময় মোগো ধারে আয়, হ্যারপর কেউ খোঁজ লয় না।’

বর্ষার সময় কিংবা উঁচু জোয়ার হলে পুরো এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। তখন দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের ১৭ নম্বর গলিতে বসবাস ২৮৮টি পরিবারের। এসব পরিবারের খাওয়ার পানির জন্য চারটি গভীর নলকূপ রয়েছে। দৈনন্দিন গৃহস্থালি ও গোসল সবই করতে হয় পাশের মোহাম্মদপুর খালে। কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে যুক্ত এই খালে দুপাশ জুড়ে দখলের কারণে এখন আর তেমন পানির প্রবাহ নেই। কখনো পায়ের পাতা ভেজে, কখনো হাঁটুসমান পানি থাকে খালটিতে, তা–ও নোংরা। তবু তাঁদের গোসল ও গৃহস্থালি কাজের পানির একমাত্র উৎস এই খালের পানি। কেবল ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়, পাশের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও পানির ভরসা এই খাল। 

চর উপেন, উত্তর ও দক্ষিণ পলাশপুর, গুচ্ছগ্রাম-৪,৬ ও ৮ নম্বর, পলাশপুর ৭ নম্বর রোড, পলাশপুর ডকইয়ার্ড, চর বদনা—এসব এলাকা নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নালাগুলো অপরিচ্ছন্ন, পাশে ময়লার স্তূপ। মশা-মাছি ভনভন করছে। খোলা এসব নালা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গলির মধ্যের অনেক রাস্তা এখনো পাকা হয়নি। নালাগুলো ময়লা-আবর্জনায় বেহাল। বর্ষার সময় কিংবা উঁচু জোয়ার হলে পুরো এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। তখন এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। 

এসব সমস্যার বিষয়ে জানতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (৪, ৫, ৬ নম্বর) জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বেলন, ‘মানুষের পাশে থেকে ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমরা আসলে কিছু করতে পারিনি। মেয়র সাহেব বরাদ্দ পাননি। আমরা কাজ করব কীভাবে। মোহাম্মদপুর খালের খুবই দুরবস্থা। ওখানে পানি আসে না। মানুষ গোসল পর্যন্ত করতে পারে না।’ 

একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী ৬ নম্বর ওয়ার্ডেরও। পলাশপুর ডকইয়ার্ড গুচ্ছগ্রাম-১ ও ৫, চর বদনা সিটি অংশ, চর উপেন পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম-২ ও ৩, চর উপেন দক্ষিণ পলাশপুর, দপ্তরখানা পূর্বাংশ, গগন গলি, পুরান কয়লাঘাট, হাটখোলা চর, মরিচপট্টি, উত্তর আমানতগঞ্জ, পূর্ব জলেরকল, এনায়েত উল্লাহ সড়ক, সায়েস্তাবাদ সড়ক, পীর সাহেব সড়ক, হজরত মাওলানা ইয়াছিন সড়ক নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এই এলাকাগুলোতে পানির সংকট যেমন রয়েছে, আছে মশার উপদ্রব। রাস্তাঘাটের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও কিছু এলাকায় পানির সমস্যা নাগরিকদের ভোগাচ্ছে। 

বরিশাল নগরীর মধ্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। হাটখোলা, পোর্ট রোডের একাংশ এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সারা বছরই এই এলাকাগুলোতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাটখোলার রাস্তা বেহাল হওয়ার কারণে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পোর্ট রোড সেতু থেকে সোনালি আইসক্রিম মোড় পর্যন্ত দুই পাশে রয়েছে অনেক ভাঙারি ব্যবসায়ীর দোকান। এই দোকানগুলোর সামনে ট্রাক এসে প্রতিদিন মালপত্র নেয়। এতে করে জনভোগান্তি বেড়ে যায়।

এই এলাকার শিশু পার্ক কলোনির বাসিন্দা ভাঙারি ব্যবসায়ী জামাল শেখ বলেন, ‘শিশুপার্ক–সংলগ্ন কলোনিতে প্রায় ৪০০ পরিবার বাস করে। গোসল ও দৈনন্দিন কাজে পাশের খালের পানির ওপর সবাই নির্ভরশীল। কিন্তু খালে পানি নেই। মোহাম্মদপুর ও আমানতগঞ্জ খাল খনন করলে আমাদের পানির কষ্ট লাঘব হবে।’ 

জানতে চাইলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খান মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, এসব খাল খননের ব্যাপারে সিটি মেয়র মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তা অনুমোদিত হলে খনন করা হবে।