বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে হামলায় আহত ১০, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে হামলায় আহত তিন শিক্ষার্থীকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাতে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের পরিচয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা গাছ ফেলে বরিশাল-ভোলা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকায় কলেজ ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনায় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত সিফাত হাসান (২২), আশিকুজ্জামান ওরফে সজীব (২২) ও আতিক শাহরিয়ার (২২) নামের তিনজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থীরা বলছেন, মিছিলে না যাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা করেছে ছাত্রলীগ, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলার চেষ্টাকালে তাঁদের প্রতিহত করা হয়েছে।

কলেজ অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন বলেন, হলে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা হামলা করে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত করেছেন। তবে ঘটনার সময় তিনি সেখানে না থাকায় কারা হামলা চালিয়েছেন, তা জানেন না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আতিক শাহরিয়ার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে তাঁরা আন্দোলন করছেন। গতকাল কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে এসেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তাঁর আগমন উপলক্ষে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখে মিছিলে অংশ নিতে বলেন কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা সাকিব ভূঁইয়া।

শাহরিয়ার আরও বলেন, মিছিলে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হন। এ নিয়ে বিকেলে তর্ক-বির্তক হলে পুলিশের হস্তক্ষেপে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। তখন তাঁদের ওপর হামলারও চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে তাঁরা নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কলেজ অধ্যক্ষকে জানান। এরপর রাত আটটার দিকে সাকিব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কলেজের ১০–১২ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ২০ থেকে ২৫ জন রামদা, স্টাম্প, লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রাবাসে হামলা করেন। তাঁরা অন্তত ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছেন।

কলেজ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়দানকারী সাকিব ভূঁইয়া বলেন, কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হতে দিতে চায়নি বিএনপি-জামায়াতের একটি পক্ষ। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে ম্যুরাল ভাঙার চেষ্টা করে তারা। এ সময় প্রতিরোধ করতে গেলে মারামারির ঘটনা ঘটে।

চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচ এম জাহিদ বলেন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রদের এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় বরিশাল-ভোলা সড়কে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। এক ঘণ্টা পর পুলিশে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে যেটুকু জানা গেছে, তাতে কলেজে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষ হলে এসে অপর পক্ষের ওপর হামলা করেছে। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। হামলার কারণ কলেজ কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। তবে এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।