জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কক্ষে তালা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনুর রহমান খানের পদত্যাগের দাবিতে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে নামফলক (নেমপ্লেট) খুলে ফেলেছেন হলের একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার দুপুরের দিকে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন তাঁরা। এরপর হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

তবে হলের প্রাধ্যক্ষ বলছেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ (পড়াশোনা শেষ) শিক্ষার্থীদের ১০ এপ্রিলের মধ্যে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন। এর ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ইন্ধন দিয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

মাওলানা ভাসানী হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম নিয়োগের পর তাঁর কাছে শিক্ষার্থীরা নানা দাবিদাওয়া তোলেন। কিন্তু কোনো দাবিই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের জন্য তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়েছেন।

যেসব কারণে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ চান, সেসব বিষয় উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগপত্রে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হলো প্রাধ্যক্ষ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান, মসজিদ সংস্কারের অসহযোগিতা, হলের সব কর্মচারীর কাজের তদারকিতে অবহেলা ও হলের নোংরা পরিবেশে নিয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া, রিডিং রুম সংস্কারের দায়িত্বহীনতা, শিক্ষার্থীদের কক্ষ সংস্কারে অনীহা ও দীর্ঘসূত্রতা, ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া, হলের দীর্ঘদিনের ইন্টারনেট সমস্যা নিয়ে দায়িত্বহীনতা ও পাঁচ মাস ধরে বলার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া, হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সামগ্রী দিতে অস্বীকৃতি, একাধিকবার বলার পরেও বিশুদ্ধ পানির ফিল্টারের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া, ওয়াশরুম সংস্কার ও পরিষ্কারে তদারকি না করা, শিক্ষার্থীদের হুমকি ও ক্ষমতার দাপট দেখানো এবং কোনো শিক্ষার্থী রাতে ফোন দিলে বিভিন্ন ধরনের কৈফিয়ত চাওয়া।

এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রিফাত হাসান বলেন, ‘কোনো সমস্যার কথা বললে উনি শোনেন, কিন্তু কোনো সমাধান করেন না। রুমগুলোতে পানি পড়ে, ছাদ সংস্কার করেন না, মসজিদে সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা—সেটাও তিনি সমাধান করেন না। এ রকম অনেক সমস্যা রয়েছে সেসব সমাধানের কোনো উদ্যোগই তিনি গত ছয় মাসে নেননি। এ কারণে আমরা তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলের বিভিন্ন বিষয় সংস্কারের জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ঈদের আগপর্যন্ত কোনো অভিযোগের কথা তারা আমাকে বলেনি। ঈদের পর ক্যাম্পাস খুলেছে মাত্র কয়েক দিন হলো। এর মধ্যে কীভাবে এসব অভিযোগ এল। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলেছি। তারা পেছনে থেকে শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়ে একাজগুলো করাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিষয়ে আমরা অতি দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করব।’