বান্দরবানে রাজার মাঠে মঞ্চ তৈরি বন্ধে জেলা প্রশাসককে রাজার চিঠি

বান্দরবান জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজার মাঠে মঞ্চ নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হচ্ছে। গতকাল সকাল ১০টায় রাজার মাঠ থেকে তোলাছবি: মংহাইসিং মারমা।

বান্দরবান জেলা শহরের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক রাজার মাঠের একাংশ দখল করে মঞ্চ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী মাঠ দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার রাজার দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রাজার মাঠ দখল বন্ধে সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর ২৯ এপ্রিল লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজার মাঠের জমির মালিক রাজা, অর্থাৎ বোমাং সার্কেল চিফ। এই মাঠে প্রতিদিন বিকেলে শত শত মানুষ মুক্ত বাতাস নিতে ভিড় করেন। কোমলমতি শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। এ জন্য মাঠ জবরদখল ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা জরুরি।

জেলা শহরের বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন রাজার মাঠে সোমবার হঠাৎ কিছু শ্রমিক এসে মাটি খনন করতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন মাঠসংলগ্ন লোকজন ও রাজার দপ্তরের কর্মকর্তারা। শ্রমিকদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, পুরোনো অনুষ্ঠান মঞ্চটি ভেঙে বড় আকারের একটি নতুন মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। জেলা পরিষদ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা ছাদসহ অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরির জন্য মাঠের মাটি খনন হচ্ছে বলে ঠিকাদার চয়ন দাশ জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের কোনায় টিনের ছাউনি দেওয়া ২০ ফুট প্রস্থের ও ৩০ ফুট দীর্ঘ পুরোনো একটি অনুষ্ঠান মঞ্চ রয়েছে। ওই পুরোনো মঞ্চ থেকে আরও প্রায় ১৫ ফুট মাঠের ভেতরে মাটি খনন করে গর্ত করা হয়েছে। ঠিকাদার চয়ন দাশ জানিয়েছেন, পুরোনো মঞ্চটি ২৫ ফুট চওড়া ও ৪০ ফুট লম্বা করে নির্মাণ করা হবে। মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সুবিধাসহ শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে। জুনের মধ্যে মঞ্চটি নির্মাণ শেষ হলে রাজার মাঠে যেকোনো অনুষ্ঠান করার জন্য আলাদাভাবে মঞ্চসজ্জার প্রয়োজন হবে না।

রাজার মাঠ এলাকার ফরিদুল আলমসহ অনেকে বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ বান্দরবান পৌর শহরে একমাত্র রাজার মাঠই খোলা জায়গা। এ জন্য এই মাঠ জেলা শহরের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। সেই ফুসফুস দখল করে অনুষ্ঠান মঞ্চ নির্মাণ কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পুরোনো মঞ্চটি সংস্কারের দরকারে মাঠ দখল না করার জন্য মাঠের আশপাশের লোকজনও দাবি জানিয়েছেন।

জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান মঞ্চ নির্মাণে বোমাং রাজার অনুমতি না নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর নির্দেশে মঞ্চটি নির্মাণ করা হচ্ছে। অত্যন্ত মনোরম নকশার মঞ্চটি নির্মাণ শেষ হলে পর্যটননগর জেলা শহর আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে বোমাং রাজার সঙ্গে আলোচনা করে মঞ্চটি নির্মাণ করা হবে।