উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ছয়টায়। এর আধা ঘণ্টা আগে ভরে যায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। এই প্রথম রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছিল সহস্র শিক্ষার্থী বরণ উৎসব। এতে অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী (লাকী)।
উৎসবের জন্য একাডেমি মিলনায়তনের বাইরে মঞ্চ করা হয়েছিল। সেখানে ছিল ১ হাজার ২০০ চেয়ার। এর পেছনেও দর্শকেরা দাঁড়িয়ে উৎসব উপভোগ করেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১০ জন নারীর একটি ঐতিহ্যবাহী নাচের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর গানে ৫০ জন এবং নৃত্যে ৩০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের প্রত্যেকের গায়ে রাজশাহীর ঐতিহ্য পাকা আমের রঙের বিশেষ পোশাক সবার নজর কাড়ে। উৎসবে পরিবেশিত গানগুলোর মধ্যে ছিল—‘আমরা সবাই মঞ্চকুঁড়ি’, ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’, ‘ধন্য মুজিব ধন্য’, ‘আরেকটিবার শেখ মুজিবের জন্ম দে না মা’ ও ‘আমরা নতুন যৌবনেরই দূত’। এ ছাড়া গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই আয়োজনের সংগীত কর্মশালা পরিচালনা করেন ইয়াসমিন আলী। নৃত্য কর্মশালা পরিচালনা করেন জাহিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে লোকসংস্কৃতি গবেষক হিসেবে তসিকুল ইসলাম, যন্ত্রসংগীতে মাকসুমুল হুদা, লোকসংস্কৃতিতে মোস্তফা সরকার ও ফটোগ্রাফিতে আজাহার উদ্দিনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
এসব পরিবেশনা শেষে শিশুদের মধ্যে দাঁড়িয়ে লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমার যখন খুব মন খারাপ হয়, তখন আমি শিশুদের কাছে যাই। তাদের কাছে গেলে নতুন করে উজ্জীবিত হই। নতুন উদ্যমে আমি আবার কাজ করতে পারি। কারণ, শিশুরা সব সময় নির্মল চিন্তা করে। তারা সুন্দরকে ভালোবাসে, অসুন্দরকে অপছন্দ করে। তারা যা বলে তা বোঝার জন্য আমরা বড়রা কোনো উদ্যোগ নিই না। ওদের কথা শুনলে বোঝা যায়, ওরা অসাধারণ কিছু বলে, স্বপ্ন দেখায়।’
নাট্যকার মলয় ভৌমিক বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা যেন শুধু সনদ পাওয়ার জন্য না আসেন, সত্যিকার শিক্ষা যেন ধারণ করেন। কারণ, সংস্কৃতিই শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তা করতে শেখায়। তখনই তাঁরা মানুষকে ভালোবাসতে পারেন।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আসাদ সরকার বলেন, ‘যে চেতনা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সেই চেতনার পরিস্ফুটন ঘটাতে সংস্কৃতি চর্চা ও সংস্কৃতি কর্মী বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করেই প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রশিক্ষনার্থী বৃদ্ধির যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম, তা আজ সফলতার মুখ দেখেছে।’