বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
হল বন্ধের প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–অবস্থান কর্মসূচি
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হল ছাড়ার নোটিশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকালে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। পরে তাঁরা হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন।
সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল রোববার হামলা হয়। এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আজ সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সকালে অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলনে নেমেছে। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে কে আর মার্কেটে এসে পৌঁছান। সেখানে ছাত্রীদের প্রতিটি হলের সামনে তাঁরা ‘আমার বোনের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগান দেন।
ছাত্রী হলগুলো প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা কে আর মার্কেট–সংলগ্ন সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাঁরা ‘কথায় কথায় হল ছাড়, হল কি তোর বাপ–দাদার’, ‘ক্যাম্পাসে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমার ভাইকে মারল কেন, বিচার চাই, বিচার চাই’সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাঁরা ব্রিফিংয়ে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো, অবৈধভাবে হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশনা বেলা দুইটার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে, হলগুলোয় চলমান সব ধরনের সুবিধা (পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস) নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে, এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর, দেশি অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এক মাস ধরে চলমান যে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে, তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পাশাপাশি আজ বেলা দুইটার মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা তুলে নেওয়ার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করেন তাঁরা।
এ সময় পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেভাবে ফ্যাসিস্ট আমলে বর্বর হামলা করেছিলেন, সেভাবেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। শিক্ষকেরা এখনো বহিরাগত গুন্ডাদের ডেকে এনে আমাদের মারধর করানোর চেষ্টা করছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তাঁরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলেন, সেটি আমার প্রশ্ন। আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা তালা ভেঙে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।’
বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলব?’
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভাঙচুরের বিষয়ে আমি অবশ্যই কমিটি করব।’