তারাগঞ্জে সড়ক দখলে ব্যবসা, জনদুর্ভোগ চরমে

তারাগঞ্জ হাটের দুই পাশে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক। এই হাটের কিছু অংশ দখল করে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। 

তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ওপর দোকান বসিয়ে মাছসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করা হয়। গত সোমবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাট তারাগঞ্জ। অথচ জায়গার সংকটে এই হাটের কিছু ব্যবসায়ী নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গার ওপর বসেন। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫টি হাটবাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। প্রতি সোম ও শুক্রবার এখানে হাট বসে। আর প্রতিদিন বসে বাজার। হাটের ভেতর দিয়ে পাকা সড়কটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরে চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে কয়েক শ রিকশা-ভ্যান, মিনিবাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে দুই উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া এই সড়ক দিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হাটের কাছের ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা–যাওয়া করে।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাগঞ্জ হাটের দুই পাশে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক। এ সড়কে মুড়িহাটি থেকে কেল্লাবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৫০০ মিটার অংশ সড়কের ওপর মাছ, হাস-মুরগি, ধান, খড়, সবজিসহ নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা-বিক্রোতার ভিড়ে সড়কের ওই অংশ যেন হাটে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

ওই সময় সড়কে দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রি করছিলেন পতন দাস নামের এক ব্যবসায়ী। সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাছের শেড পুরোনো হয়ে গেছে। সেখানে জায়গাও নেই। আর মানুষ সড়কের পাশ থেকে মাছ কিনতে বেশি পছন্দ করেন, বিক্রিও ভালো হয়। তাই সড়কের পাশে বসেছি, কিন্তু সড়ক বন্ধ করিনি।’

আরেক মাছ ব্যবসায়ী ওয়াদুদ আলী বলেন, ‘জায়গা থাকলে কি আর সড়কে মাছ বিক্রির জন্য বসতাম। আমাকে একাই বলছেন কেন? দেখেন না কত মানুষ সড়কের দাঁড়ে ব্যবসা করছে। হাটের ইজারাদার তো ঠিকই খাজনা নেয়। তখন তো বলে না যে সড়কে বসছেন খাজনা লাগবে না।।’

তারাগঞ্জ ও/এ ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ঢুলিয়া গ্রামের আরমান হোসেন বলেন, যখন মাদ্রাসা খোলা থাকে, তখন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। বিশেষ করে হাটের দিন মাদ্রাসার গেট পর্যন্ত রিকশা-ভ্যান নিয়ে যাওয়া যায় না। হেঁটে ঠেলাঠেলি করে অতি কষ্টে যাতায়াত করতে হয়।

এক যুগের ব্যবধানে লাখ টাকার হাট এখন দুই কোটি টাকার রাজস্ব আয়ে পরিণত হয়েছে জানিয়ে তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে সড়কে দোকান নিয়ে বসছেন। তাদের সড়কে ওপর থেকে উঠে যেতে বললেও তাঁরা শোনেন না। উল্টাপাল্টা কথা বলে। 

কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, ‘হাটের দিন এমন অবস্থা তৈরি হয় যে দুই মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায়ও অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। কয়েক দিন আগে বাধ্য হয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের সড়ক থেকে দোকান ওঠানোর জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা কেউ শোনেন না। এসব কারণে তারাগঞ্জ হাটটি তাঁর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

এ বিষয়ে তারাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।