আসামি শাহরিয়ার নাফিস
ছবি: সংগৃহীত

শাহরিয়ার নাফিস, বাবু ও জহিরুল হাসেম পরস্পর বন্ধু। বন্ধু জহিরুলের কাছ থেকে শাহরিয়ার ও বাবু কিছু টাকা ধার নেন। পাশাপাশি জহিরুলের একটি স্মার্টফোন চেয়ে নেন শাহরিয়ার। জহিরুল তাঁদের কাছে পাওনা টাকা ও স্মার্টফোন ফেরত চাইলে বিপত্তি বাধে। তাঁরা রাতের আঁধারে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে জহিরুলকে হত্যা করেন এবং দুর্ঘটনা বলে প্রচার করেন। ঘটনার দুই বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে আসে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত শাহরিয়ার নাফিসকে গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের হালদারপাড়ার বাসিন্দা। ৪ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) স্বাগত সাম্য তাঁর জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।

নিহত জহিরুল হাসেম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার জহুরা বেগমের ছেলে। আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পিবিআই।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পৈরতলা রেলগেটের কাছে দারিয়াপুর সেতুর ওপর ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থেকে জহিরুলের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দুর্ঘটনাজনিত কারণে জহিরুলের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট নিহত জহিরুলের মা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদারের দিকনির্দেশনায় মামলাটি তদন্ত শুরু করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনোয়ার হোসেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারপাড়া এলাকার বাবু ও হালদারপাড়া এলাকার শাহরিয়ার নাফিস জহিরুলের দুই বন্ধু। তাঁরা দুজন জহিরুলের কাছ থেকে যথাক্রমে ৭ হাজার ও ৪ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ঘটনার দুই দিন আগে জহিরুলের কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন নেন শাহরিয়ার। শাহরিয়ার পরে ফোনটি বিক্রি করে দেন। এরপর আসামিদের কাছে পাওনা টাকা ও স্মার্টফোন ফেরত চান জহিরুল। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে তর্ক হয়।

মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার আগের দিন দুপুরে বাবু ও শাহরিয়ার শহরের কাচারিপাড় মুক্তমঞ্চে বসে জহিরুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আড্ডা দেওয়ার কথা বলে জহিরুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান তাঁরা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিয়ে রাত আনুমানিক একটার দিকে সদর উপজেলার পৈরতলা রেলগেটের কাছে দারিয়াপুর সেতুর ওপর বসে আবার আড্ডা দিতে থাকেন তাঁরা। রাত তিনটার দিকে ওই রেলপথে একটি ট্রেন আসছিল। এ সময় আসামিরা জহিরুলকে জোর করে ধরে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে দেন। এতে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ঘটনাস্থলেই জহিরুল নিহত হন।

পরিদর্শক মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, লাশ উদ্ধারের পর আখাউড়া রেলওয়ে থানায় হওয়া অপমৃত্যু মামলার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত বলে উল্লেখ করা হয়। পরে নিহতের মা আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জড়িত আসামি শাহরিয়ার নাফিসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।