কুমিল্লায় গুলিতে নিহত কলেজছাত্রের বাড়িতে মাতম
কুমিল্লার শাসনগাছা বাস টার্মিনালের পেছনে ডাকবাংলো সড়ক। সড়কের উত্তর পাশে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া দপাদার বাড়ি। ওই এলাকার চিপা গলি দিয়ে ভেতরে গেলেই জামিল হাসানদের (অর্ণব) ঘর। ঘরের মধ্যে মানুষের ভিড়। তারা জামিলের বাবা, মা, ভাই ও বোনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ বিলাপ করছিলেন। স্বজনদের কোনো সান্ত্বনাই পরিবারের সদস্যদের চোখের পানি থামাতে পারছিল না।
পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে তাঁরা পাগলপ্রায়। একপর্যায়ে আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাড়ির সামনের সড়কে লাশ আসে। লাশ দেখে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া দুইটায় জুমার নামাজের পর কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা বাস টার্মিনালের মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একই এলাকার মোল্লাবাড়ি ও মধ্যমপাড়া এলাকার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে মধ্যমপাড়া দপাদার বাড়ির মো. আজহার মিয়ার বড় ছেলে জামিল হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরও তিনজন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
জামিলের বাবা মো. আজহার মিয়ার দাবি, তাঁর ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পড়তেন। শাসনগাছা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সড়কে লার্নিং হোম নামের একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন। এ ছাড়া জামিল শাসনগাছা বাস টার্মিনালে কুমিল্লা থেকে গৌরীপুরগামী সততা পরিবহনের বাস কাউন্টারে কাজ করতেন।
তবে এলাকার অন্তত পাঁচজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামিল ছেলে ভালো। বাস টার্মিনালে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সঙ্গে চলতেন। তাদের সঙ্গে না চললে শাসনগাছা বাস টার্মিনালে কাজ করা যায় না।
মো. আজহার মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে জুমার নামাজ পড়ে ঘরে ফিরছিল। বেলা সোয়া দুইটা থেকে শাসনগাছা বাস টার্মিনালের মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মধ্যমপাড়া ও মোল্লাবাড়ি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তখন ডাকবাংলো সড়ক দিয়ে নামাজ পড়ে আসার পথে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। গুলি তার বুকে লাগে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ছেলেটা। আমি এর বিচার চাই। মোল্লাবাড়ির রাব্বী গোলাগুলি করে।’
জামিল হাসানের মা ঝর্ণা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জামিল হাসান সবার বড়। এই শোক কেমনে সইব। ছেলেটা সংসারের জন্য খাটত। আমার ছেলে রাজনীতি করত না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
জামিলের একমাত্র বোন আফসানা আক্তার বলেন, ‘ভাইয়া ভালো মানুষ ছিলেন। এখানকার অন্য পোলাপাইনের চেয়ে আলাদা। কাজ করে খাইত, চলত। এলাকার কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত না তিনি। রোজা রেখে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ঘরে ফেরার পথে গুলি এসে তার বুকে লাগে।’
আজ দুপুর ১২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, শাসনগাছা ডাকবাংলো সড়কের জনৈক নাসির উদ্দিন আহমেদের পাশের বাসা চান্দের বাড়ির জানালার কাচ ভাঙা। জানালার লোহার অংশে কোপের চিহ্ন। ওই বাসার পাশেই গুলি লাগে জামিলের বুকে। আধা ঘণ্টা পর (দুপুর সাড়ে ১২টায়) লাশ আসে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এ সময়ে দপাদার বাড়ি এলাকার সড়কে লাশ দেখতে মানুষের ভিড় করেন।
জামিলের বাবা আজহার মিয়া বলেন, ‘বাস টার্মিনালের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ চলছিল। আমার ছেলে তো এতে নেই। আমি লাশ দাফনের পর মামলা করব।’
আজ জোহর নামাজের পর শাসনগাছা ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশ ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা লাশ দাফন শেষে মামলা করবেন। আমরা আসামিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারব। শাসনগাছা এলাকার মোল্লাবাড়ি ও মধ্যমপাড়া এলাকার লোকজন বাস টার্মিনালের মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলাগুলি করে। এতে একজন মারা যান।’