নির্বাচন কমিশনকে অদক্ষ আখ্যা দিয়ে স্থূল কারচুপির অভিযোগ করলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক

সংবাদ সম্মেলনে উপনির্বাচনে স্থূল কারচুপির অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক। সোমবার দুপুরে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারে দলীয় কার্যালয়ে
ছবি: বদর উদ্দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে অদক্ষ আখ্যা দিয়ে উপনির্বাচনে স্থূল কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। আজ সোমবার দুপুরে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারে জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

গতকাল রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউল হক বলেন, ‘উপনির্বাচনে নির্বাচনে স্থূল কারচুপি করা হয়েছে। কারণ, আমার এলাকার যে ভোটার তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে, তাতে কেন্দ্রের ভেতরের তালিকার সঙ্গে বাইরের তালিকার গরমিল ছিল। কেন্দ্রের ভেতরে রাখা তালিকার সঙ্গে আমার এজেন্টদের তালিকার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমার এখানে ভুয়া ভোটার তালিকা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এলাকার ভোটার তালিকা সঠিক ছিল। ভুয়া তালিকার কারণে ৫০ হাজার ভোটার ভোট দিতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে নাটক করা হয়েছে, প্রহসন করা হয়েছে। এ ধরনের কারচুপির ইতিহাস পৃথিবীতে আছে কি না, আমি জানি না। উলটপালট করে ভুয়া ভোটার তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কত মানুষ যে কেন্দ্রে গিয়ে ফেরত এসেছে, তার ইয়ত্তা নেই। ভোটার তালিকা সঠিক হলে নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হতো।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। জিয়াউল হক সরাইল উপজেলার বাসিন্দা। আর বিজয়ী প্রার্থী শাহজাহান আলম আশুগঞ্জের বাসিন্দা। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ৭২। রোববারের নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৬৫টি, যা মোট ভোটের ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

জিয়াউল হক জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। গত রোববার অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হলেন। তিনি বর্তমানে জাপার (রওশন এরশাদ) কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।

সংবাদ সম্মেলেনে জিয়াউল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছিল, নির্বাচন হবে আরবি আলিফ অক্ষরের ন্যায় সোজা। তা হয়নি। যারা কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না, জালিয়াতির আশ্রয় নেয়, কারচুপির আশ্রয় নেয়, এ ধরনের অদক্ষ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা সফল হবে, তা আল্লাহই জানেন। নির্বাচনের ফলাফলে আমি হতাশ হয়েছি। আশুগঞ্জের অনেক কেন্দ্রে মৃত ও জীবিত প্রবাসী সবার ভোট কাস্ট করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা উচিত।’

সরাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হুমায়ুন কবীবের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলা জাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রউফ, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ শিকদার, সরাইল উপজেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদ মাহফুজ মিয়া প্রমুখ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। রোববার এ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে আবার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।