নারায়ণগঞ্জে আজমেরীর ক্যাডারদের জমি দখলের চেষ্টা, দুজন গুলিবিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জে জমি দখলের চেষ্টায় গুলিবর্ষণ করলে আজমেরী ওসমানের ক্যাডারদের কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ও ভাঙচুর করেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় জমি দখলের চেষ্টাকালে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতুর পূর্ব পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।

মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর নিয়ে আজমেরী ওসমানের ক্যাডাররা জমি দখলের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মঈনুল হক ওরফে পারভেজ (৪১) ও তাঁর স্ত্রী সোমা আক্তার (৩৬) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে। আর গুলিবিদ্ধ মঈনুল জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক প্রয়াত রাইসুল হকের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফরাজিকান্দা এলাকায় জেলা জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা রাইসুল হকের মালিকানাধীন ৬৬ শতাংশ জমিতে একটি বাজার আছে। বাজারটি তাঁর ছেলে মঈনুল হক দেখাশোনা করেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের বহর ও দুটি হাইয়েস গাড়ি নিয়ে ওই জমিটি দখল করতে যান ফরাজিকান্দা এলাকায় আজমেরী ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত শামীম হায়দার ওরফে পিৎজা শামীম। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জমি পরিমাপ করে বাঁশের খুঁটি পোতা শুরু করেন। খবর পেয়ে মঈনুলসহ তাঁদের স্বজনেরা সেখানে গিয়ে তাঁদের কাছে জমিতে খুঁটি লাগানোর কারণ জানতে চান। এ সময় আজমেরী ওসমানের সহযোগীরা খেপে গিয়ে তাঁদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মঈনুল হক। তাঁকে বাঁচাতে তাঁর স্ত্রী সোমা আক্তার এগিয়ে গেলে দখলকারীরা তাঁকেও মারধর করেন এবং পায়ে গুলি চালান। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ধাওয়া দিলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী ফরাজিকান্দা এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. বিপ্লব বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আজমেরী ওসমানের শতাধিক ক্যাডার অস্ত্রশস্ত্রসহ মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে জমিটি দখল করতে আসে। তখন তারা কয়েকটি গুলি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক হোসেন বলেন, চারটি অস্ত্র দিয়ে দুই দিক থেকে ক্যাডাররা ১০-১২টি গুলি ছুড়েছে। এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে ক্যাডাররা সেতু পার হয়ে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাসিম ওসমান সেতুর টোল প্লাজার এক ব্যক্তি জানান, আজমেরী ওসমানের ক্যাডার বাহিনীর মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর টোল না দিয়েই সেতু পার হয়েছে। তিনিও বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে জানান।

গুলিবিদ্ধ মঈনুলের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে তাঁদের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আজমেরী ওসমান লোকজন পাঠিয়ে তাঁদের জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। আজ দুপুরে আজমেরী ওসমানের সহযোগী শামীম মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে জমি দখল করতে আসেন। এ ঘটনায় তাঁর ভাই ও ভাবি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ আসে। এর আগে থানায় তাঁর ভাই মঈনুল একটি জিডি করেছিলেন বলে তিনি জানান।

গত পরশু রাতেও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আজমেরী ওসমানের ক্যাডাররা বাড়িতে এসে তাঁদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন মঈনুলের চাচা আবু তালেব। তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে তাঁর ভাই ওই জমি কিনেছেন। সম্প্রতি ভুয়া ওয়ারিশনামার কাছ থেকে ওই জমি আজমেরী ওসমানের মা পারভীন ওসমান ও তাঁর বোন আইরিন ওসমানের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। তাঁরা দলিল নয়, জোর করে জমি দখলে নিতে চান।

অভিযোগের বিষয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী শামীম হায়দার ওরফে পিৎজা শামীমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফোন না ধরায় আজমেরী ওসমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেলের আগুন নেভানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ। এক পক্ষ মঈনুল হক, অন্য পক্ষে আজমেরী ওসমান। দুপুরে জমি দখল করতে গেলে সংঘর্ষ হয়। দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছে কি না, সেটা তাঁরা জানেন না। এ ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেননি।