ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুদকের মামলা
সম্পদের তথ্য গোপনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মচারী মিহির কুমার ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী শিল্পী রানী ঘোষের নামের মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুপুরে দুদকের সমন্বিত কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে উপসহকারী পরিচালক ইমরান খান এ দম্পতির নামে পৃথক দুটি মামলা করেন।
মিহির কুমার ঘোষ (৫১) ও শিল্পী রানী ঘোষ (৪২) দম্পতি জেলা শহরের টিএ রোড মৌড়াইলের বাসিন্দা। মিহির বর্তমানে বিজয়নগর ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। এর আগে একই পদে তিনি নাসিরনগরে কর্মরত ছিলেন। একটি মামলায় মিহিরকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় শিল্পী ও তাঁর সহযোগী হিসেবে মিহিরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে দুদক অনুসন্ধান শেষে শিল্পী রানী ঘোষ ও তাঁর স্বামী মিহির কুমার ঘোষের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পান। ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট শিল্পী রানীর কাছে সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেয় দুদক। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুদকের কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করে পাঠান শিল্পী। শিল্পী রানী দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তাঁর ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তাঁর নামে ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। পারিবারিক ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ তাঁর নামে মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৮ টাকার সম্পদ পায় দুদক। তিনি ২০১০-১১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন ও ব্যবসা থেকে তাঁর আয় দেখান ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং বিনিয়োগ দেখান ২ হাজার টাকা। ২০১০-১১ সালে ব্যবসা থেকে উত্তোলন করেন ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আয়কর নথি খোলার পর গৃহ সম্পদ ও ব্যবসার আয় পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ টাকা। কিন্তু দুদক যাচাইকালে ব্যবসাসংক্রান্ত তাঁর কোনো ধরনের নথি পায়নি। তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৯ টাকা।
মিহির কুমার অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে ২০১০-১১ সালে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা হিসাব/তথ্য প্রদানসহ ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭২২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
আরেক মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মিহির কুমার ১৯৯৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে রয়েছেন। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেন। যাচাইকালে তাঁর নামে ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পায় দুদক।
দুদকের উপসহকারী পরিচালক ইমরান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামী–স্ত্রী দুজনেরই সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন। স্ত্রীর নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছি। স্বামীকে সহায়তা করায় স্ত্রীর মামলায় মিহিরকে আসামি করা হয়েছে।’