সুনামগঞ্জের হাওর
বাঁধ নির্মাণের জরিপ শুরু, বরাদ্দ ৯০ কোটি টাকা
জরিপের কাজ চূড়ান্ত হলে প্রাক্কলনে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়বে। তবে গত বছরের তুলনায় কাজ কম হবে বলে মনে করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জের হাওরে পানি কমতে শুরু করেছে। ভেসে উঠছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হাওরে এই বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে প্রকল্প ও ব্যয় নির্ধারণের জন্য জরিপের কাজ শুরু করেছে। এবার প্রথম পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণকাজে ৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
জরিপকাজ চূড়ান্ত হলে মোট প্রাক্কলনে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়বে। তবে এবার বড় বন্যা না হওয়ায় গত বছরের তুলনায় কাজ কম হবে বলে মনে করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ শেষ করার কথা। ৬ নভেম্বর থেকে জেলার ১২টি উপজেলায় ২৬টি দল কাজ করছে। এরপর বাঁধের কাজ শুরু হবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। কাজের সময়সীমা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সুনামগঞ্জে ২০১৭ সালের পর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজের পুরোটাই হচ্ছে স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে। তবে কোনো বছরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু এবং শেষ করা যায়নি। কাজের শুরুতে ধীরগতি এবং শেষে তাড়াহুড়া থাকে। এতে ফসল ঝুঁকিতে পড়ে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ৯৫টি হাওরে প্রতিবছর সোয়া দুই লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এসব হাওরে বেড়িবাঁধ আছে ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটারের মতো। পাউবো কাজ করে ৪০টি হাওরে। হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ হতো। ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তখন মামলাও হয়। এরপর পাউবো হাওরে বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে। এতে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঠিকাদারদের। কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে (পওর বিভাগ-১) সদস্যসচিব করে জেলা কমিটির এবং প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি ও পাউবোর উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে পাঠায় জেলা কমিটিতে। পরে জেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। গতবার ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৬৪টি। এতে প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি টাকা। তবে কাজের শেষে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত বিল ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পিআইসিদের বিল দেওয়া হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। এখনো গত বছরের কাজের ২২ কোটি টাকা বিল বকেয়া আছে। পাউবো কর্মকর্তা বলছেন, এই অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, অর্থ ছাড় হলেই বকেয়া বিল পাবে পিআইসিগুলো।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের নেতারা বলছেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেখা যায়, এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। আবার নামে-বেনামে পিআইসিতে ঢুকে পড়েন তাঁদের লোকজন। তাঁরাই মূলত কাজে গাফিলতি করেন। আবার কাজ শুরুতে বিলম্ব হলে সময়মতো কাজ শেষ করা যায় না। এটা প্রায় প্রতিবছর হয়। তাই যথাসময়ে কাজ শুরু ও শেষ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং শেষের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কাজ শুরুতে দেরি হলে শেষও হয় বিলম্বে। এটা একটা বড় সমস্যা।’ তিনি আরও বলেন, প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসি গঠনে গণশুনানির কথা থাকলেও মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তা সেটি যথাযথভাবে করেন না। এটি নিশ্চিত করা গেলে বাঁধের কাজে অনিয়ম কমে যেত।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাওরে বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্যসচিব মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জরিপকাজ শুরু হয়েছে। হাওর থেকে পানি নামার গতিও ভালো। এবার ব্যয় কমবে। আমরা ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করব। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।