শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে মোটরসাইকেল নেই, অলস পড়ে আছে দুই ফেরি

যানবাহনের অপেক্ষায় বসে আছে ফেরি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে হঠাৎ যেন নীরবতা নেমে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ঘাট থেকেই ফেরি চলাচল করেনি। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে দুটি কেটাইপের ফেরি দিয়ে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে ঈদে ঘরমুখী মানুষের মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছিল। তবে আজ সকাল ছয়টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। তাই আজ সকাল থেকে শিমুলিয়া–জাজিরা নৌপথের ফেরিতে পারাপারের জন্য আর কোনো মোটরসাইকেল বা অন্য যানবাহন ঘাটে আসেনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ঘরেফেরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে মোটরসাইকেল পারাপার করার জন্য গত সোমবার শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথ চলাচলের জন্য কেটাইপ ফেরি কুঞ্জলতা ও কলমিলতা ভোলা থেকে আনা হয়। ফেরি দুটি ভোলার ইলিশা-ভোলা মজু চৌধুরীর ঘাট নৌপথে চলাচল করত। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফেরি দুটি শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে চলাচল শুরু করে। এতে মঙ্গলবার ১ হাজার ২০০ ও বুধবার ১ হাজার ৩০০ মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়েছে।

সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার সময় ১৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে কলমিলতা ছেড়ে যায়। এদিকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে কুঞ্জলতা ফেরি শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। বর্তমানে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি কুঞ্জলতা ও সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে ফেরি কলমিলতা অলস বসে আছে। মোটরসাইকেল বা কোনো যানবাহন এলে ফেরিগুলো ছাড়া হবে।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক জামজল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই দিনে শিমুলিয়া ঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক মানুষ ভিড় করেছিলেন। আমরা দুটি ফেরি দিয়ে দুই দিনে অন্তত ২ হাজার ৫০০ মোটরসাইকেল পারাপার করেছি। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করবে, তাই মোটরসাইকেল চালকেরা সকাল থেকে পদ্মা সেতুতে যাচ্ছেন। মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যানবাহন ফেরি পারাপারের জন্য ঘাটে আসছে না। তবে দুই ঘাটে দুটি ফেরি প্রস্তুত রাখা আছে। যানবাহন এলে পারাপার করা হবে।’

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। এর পরদিন থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে ওই দিন রাতে সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু হয়। এরপর সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-শিবচরের বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথ ব্যবহার করে যাতায়াত করতেন। এ অঞ্চলের অনেক মানুষ সহজে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। মোটরসাইকেলের চালকেরা ফেরিতে পদ্মা নদী পারাপার হতেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। তখন বিপাকে পড়েন মোটরসাইকেলে চলাচলকারীরা।

আরও পড়ুন

এরপর তাঁরা মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন। অনেকে ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে করে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার করতেন। অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও লঞ্চে মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতেন। এতে ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছিল মোটরসাইকেলের চালকদের। এমন ভোগান্তি বিবেচনায় শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে ফেরি চালু করার সিদ্ধান্ত আসে। ফেরিতে মোটরসাইকেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১৫০ টাকা। তবে আজ সকাল থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল ধরা হয়েছে ১০০ টাকা।

আরও পড়ুন

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট ও সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে ফিরছেন। তাই ঢাকা প্রান্ত থেকে যানবাহন ও মোটরসাইকেলের চাপ অনেক বেশি। তবে আজ সকাল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার শুরু হয়েছে। তাই ঘাটে দুটি ফেরি অলস পড়ে আছে। ফেরি দুটি এখন কী করা হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে দুই ঘাটে দুটি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।