মেয়ের মুখে বাবা ডাক শোনা হলো না রিয়াদের
পড়াশোনা শেষ করেননি। এর মধ্যেই দেড় বছর আগে বিয়ে করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এলাকায় একটি দোকান পরিচালনা করে সংসার চালাতেন হাসান রিয়াদ (২৬)। তাঁর একমাত্র সন্তানের জন্ম হয় সাত মাস আগে। নাম রাখেন সিদরাতুল মুনতাহা। মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনবেন—এ প্রতীক্ষায় দিন কাটছিল তাঁর। তবে বাবা ডাক আর শোনা হয়নি। মেয়ের মুখে কথা ফোটার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে রিয়াদকে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন হাসান রিয়াদ (২৬)। গত সোমবার রাতে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী রিয়াদ।
রিয়াদ চরম্বা ইউনিয়নের লুকতার বরপাড়া এলাকার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। লোহাগাড়ার চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে তিন কিলোমিটার উত্তরে বার আউলিয়া গেট। সেখান থেকে বার আউলিয়া সড়ক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চার কিলোমিটার এগোলেই চরম্বা জামছড়ি সেতু এলাকা। সেখান থেকে গ্রামীণ সড়ক ধরে আধা কিলোমিটার উত্তরে রিয়াদদের আধপাকা ও টিনশেডের বাড়ি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পুরো বাড়িতে সুনসান নীরবতা। কারও মুখে কোনো কথা নেই। পারিবারিক কবরস্থানে রিয়াদের দাফন শেষে আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। বাড়িতে অনেকটা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছেন রিয়াদের মা সাজেদা বেগম ও স্ত্রী ফাতিমা সাদিয়া।
প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিল রিয়াদ। মেয়েকে ছাড়া বাইরে এক রাতও থাকত না। বাবা ডাক শোনার কত ইচ্ছা ছিল রিয়াদের। মেয়ের মুখে বাবা ডাক শোনার আগেই আমার ছেলেটা চলে গেল।আবদুল কুদ্দুস, নিহত রিয়াদের বাবা
বাড়ির সামনে রিয়াদের বাবা আবদুল কুদ্দুস বসে ছিলেন। তাঁর কোলে তখন রিয়াদের সাত মাস বয়সী মেয়ে। আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিল রিয়াদ। মেয়েকে ছাড়া বাইরে এক রাতও থাকত না। বাবা ডাক শোনার কত ইচ্ছা ছিল রিয়াদের। মেয়ের মুখে বাবা ডাক শোনার আগেই আমার ছেলেটা চলে গেল।’
রিয়াদের বাবা আরও বলেন, বাবার স্নেহ বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলল ছোট্ট মেয়েটি। রিয়াদের স্ত্রী ও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায়।
বাড়ির উঠানে কথা হয় নিহত রিয়াদের খালাতো ভাই মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার রাতে উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নের মগদিঘীর পাড় এলাকায় তিনি, তাঁর আরেক খালাতো ভাইসহ রিয়াদ নানার বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার পথেই দুর্ঘটনা ঘটে।
মাহমুদুল বলেন, ‘আমি, রিয়াদ ও সাইফুল ইসলাম নানা ও বড় মামার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে রাতের খাবার খেয়েছি। এরপর সেখান থেকে বের হই রাত ১১টার দিকে। রিয়াদ একটি মোটরসাইকেলে ছিল, আমরা দুজন পৃথক মোটরসাইকেলে পেছনে ছিলাম। হঠাৎ একটি ট্রাক উল্টো পথে এসে রিয়াদকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।’