নকশা বদলে টাইগারপাসের দ্বিতল সড়কের পাশেই র‍্যাম্প নির্মাণের চিন্তা

র‍্যাম্প নির্মাণের প্রতিবাদে পরিবেশকর্মীদের আন্দোলনফাইল ছবি

নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে আলোচিত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কের ওপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আগের নকশা সংশোধন করে এখন মূল সড়কের বাইরে রেলওয়ের জায়গায় এই র‍্যাম্প নামানোর জন্য নতুন নকশা করেছে সংস্থাটি। এতেও বেশ কিছু গাছ কাটা পড়বে। তবে এই নকশা অনুযায়ী র‍্যাম্প নির্মাণ করা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

ঈদের ছুটির পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংশোধিত নকশা নিয়ে বসবেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তখন র‍্যাম্প নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে নগরের টাইগারপাসে পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো ধরনের স্থাপনা চান না নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীরা। তাঁরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টাইগারপাসের র‍্যাম্প বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। গাছ কেটে ও পরিবেশের ক্ষতি করে র‍্যাম্প নির্মাণ না করতে সিডিএকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।  

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র‍্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র‍্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিডিএ। এ জন্য বন বিভাগের অনুমোদনও নেয় তারা। আর কাটতে যাওয়া গাছগুলোয় লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কের ছোট-বড় ৪৬টি গাছ কাটা হবে—গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ১ এপ্রিল থেকে পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে ২ এপ্রিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সিডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই দিন নকশা সংশোধনের আশ্বাস দেন সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ। তবে আন্দোলনকারীরা তখন র‍্যাম্প নির্মাণ না করার দাবি জানান।

সিডিএর প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানায়, দুই মন্ত্রীর নির্দেশনা এবং আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে আগের নকশা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। আগের নকশা সংশোধন করে একটি খসড়া নকশা করা হয়েছে। এই নকশা অনুযায়ী র‍্যাম্পটি এখন আর দ্বিতল সড়কের ওপর দিয়ে নামানো হবে না। সেটি নামানো হবে মূল সড়কের পাশের ফুটপাতের বাইরের অংশ দিয়ে। এ জন্য কিছু স্থাপনা ভাঙতে হবে এবং পাঁচ-ছয়টি গাছ কাটা যাবে। আর টাইগারপাস মোড়ের পুরোনো গাছের ডালের একটি অংশ কাটতে হবে।

জানতে চাইলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষতি না করে কীভাবে র‍্যাম্প নির্মাণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। ঈদের পর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে র‍্যাম্প নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হবে। আর র‍্যাম্প নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নামানোর জন্য শতবর্ষী গাছ কাটতে গায়ে দেওয়া হয় নম্বর। ৩১ মার্চ বেলা দেড়টায় সিআরবি এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

র‍্যাম্প নির্মাণের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সংগঠক পরিবেশকর্মী রিতু পারভী প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএ র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য নকশা সংশোধন করছে, এ রকম শুনেছেন। কিন্তু এতে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। এই র‌্যাম্প নির্মাণ করা হলে টাইগারপাসের দ্বিতল সড়কের সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া এখন এখানে যে মানসিক প্রশান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে, র‌্যাম্প নির্মাণ করা হলে তা থাকবে না। তাই এই এলাকায় কোনোভাবেই র‌্যাম্প হোক তা চান না।  

শুরু থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, টাইগারপাস-সিআরবি এলাকায় র‍্যাম্পের কোনো প্রয়োজন নেই। যাঁদের দরকার পড়বে, তাঁরা জিইসি মোড় বা আগ্রাবাদ থেকে উঠবেন। আর এখন যেভাবে র‌্যাম্প নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে, তাতেও বাধা দেবেন তাঁরা। এই র‌্যাম্প তো জনস্বার্থে হচ্ছে না, কতিপয় কর্মকর্তার পকেট ভারী করতে এখানে র‌্যাম্প নির্মাণ করতে অনড় রয়েছে সিডিএ। কিন্তু তা তাঁরা হতে দেবেন না।