নিজের আয়ে এসএসসি পাস করেছে শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবু

চাঁদ বাবু
ছবি: সংগৃহীত

জন্ম থেকে দুই হাঁটু ও হাতে ভর করে চলে চাঁদ বাবু। হাত দুটিও কাজ করে না ঠিকমতো। তবু পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহ শৈশব থেকে। বাবা পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলেন না। তাই কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে বাবু। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৪.৭৫ পেয়েছে সে। স্বপ্ন দেখছে প্রকৌশলী হওয়ার।

চাঁদ বাবু পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক আবদুস সবুরের ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সে। উপজেলার ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমির কারিগরি বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এই অদম্য মেধাবী।

চাঁদ বাবু প্রথম আলোকে বলে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বহু কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু সবাইকে স্কুলে যেতে দেখে তারও পড়ালেখা করার ইচ্ছা হয়। এরপর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। সেখান থেকে পিএসসি পাস করে উদয়ন একাডেমিতে ভর্তি হলে বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু দরিদ্র বাবা বই–খাতা কেনার খরচও দিতে পারতেন না। একপর্যায়ে গ্রামের কয়েক ব্যক্তি তাকে একটি হাতে চালানো ভ্যান তৈরি করে দেন। সেই ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোকজনের বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করে তা পল্লী বিদ্যুতের অফিসে জমা দিত। এ কাজের জন্য লোকজন যে টাকা দিতেন, সেই আয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে সে।

প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জানিয়ে চাঁদ বাবু বলে, ‘পরবর্তী পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোটাব, সেটা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্ম হয় চাঁদ বাবুর। প্রথমে পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারেননি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি সবার নজরে আসে। পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তাঁরা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু চাঁদের দরিদ্র বাবা ছেলেকে ঢাকায় নিতে পারেননি। ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে হয় তাকে।

চাঁদ বাবুর বাবা আবদুস সবুর প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক ত্রুটি থাকলেও তাঁর ছেলের মনের জোর অনেক বেশি। এই জোরেই সে পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। ছেলের জন্য কিছু করতে পারেননি বলে কষ্ট অনুভব করেন। ভবিষ্যতে বাবু কীভাবে পড়ালেখা চালাবে, সেটা নিয়ে চিন্তা হয়। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারেন না।

ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমির প্রধান শিক্ষক হেদায়েতুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাঁদ বাবু খুবই মেধাবী ছেলে। পড়ালেখার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ বাবুর। তবে ওর পরিবার খুবই দরিদ্র। বিদ্যালয় থেকে আমরা ওকে সহযোগিতা দিয়েছি। সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে প্রত্যাশা করি।’

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পাওয়া চাঁদের এ সাফল্যে আনন্দিত ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খানও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তার উচ্চশিক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।