বাগেরহাটে মার্কেটের জন্য সরকারি পুকুর ভরাটের উদ্যোগ

এলাকাবাসীর তীব্র বিরোধিতা। ১ একর ৩৫ শতাংশের সরকারি পুকুরটি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত।

শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারে মিষ্টিপানির পুকুর। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

আগে এক পাশে বিপণিবিতান করে পুকুরটি সংকুচিত করা হয়েছিল। এবার অন্য পাশেও বিপণিবিতান করার চেষ্টা চলছে। এতে পুকুরটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, উপকূলে যেখানে মিঠাপানির তীব্র সংকট, সেখানে মিঠাপানির একটি আধার এভাবে বিনষ্ট হলে সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়বে।

১ একর ৩৫ শতাংশের সরকারি এই পুকুর বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত। পুকুরটির একাংশ ভরাট করে বিপণিবিতান (মার্কেট) নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ ইজারা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সরকারি পুকুরটি রক্ষায় আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। নোটিশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়েছে। বেলা নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত নোটিশ গত সোমবার বিবাদীদের পাঠানো হয়েছে।

যেহেতু পানির সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত, পুকুরের ওপর মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
ঝুমুর বালা, বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

পুকুরটি রক্ষার দাবিতে স্থানীয় সুধীসমাজকে নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা ৪১ সদস্যবিশিষ্ট ‘শরণখোলা পুকুর-জলাশয় রক্ষা কমিটি’ গঠন করেছেন। সম্প্রতি ওই কমিটির পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইজারা বাতিল চেয়ে পৃথক দুটি আবেদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধন করেছেন।

পুকুর-জলাশয় রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথা জানানো হয়েছে। আমরা ওই ইজারা স্থায়ীভাবে বাতিল চাই। সেই সঙ্গে পুকুরটি পুনঃখনন এবং এর আগে নির্মিত মার্কেট অপসারণ করে জনসাধারণের সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, জেলা পরিষদ অনৈতিকভাবে পুকুরটি হত্যা করতে চাইছে। এর আগে তারা পুকুরের পূর্ব পাশে বিপণিবিতান করে পুকুরটি সংকুচিত করেছে। এবার দক্ষিণ পাশে আরেকটি বিপণিবিতান হলে পুকুরটি অস্তিত্ব হারাবে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শতবর্ষী পুকুরটি রায়েন্দা বাজারের কয়েক হাজার মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে। সংরক্ষিত এ পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষও বন্ধ আছে। এই পুকুর জেলা পরিষদ কীভাবে ইজারা দেয়, তা বোধগম্য নয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর উপকূলের উপজেলা হওয়ায় শরণখোলায় পানযোগ্য মিঠাপানির তীব্র সংকট। মাটিতে নলকূপ বসালেও তাতে লবণাক্ত পানি উঠে আসে। মিঠাপানির অভাব দূর করতে ১৯৩৫ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে তৎকালীন খুলনা জেলা পরিষদ রায়েন্দা পুকুর খনন করে। ১ একর ৩৫ শতাংশ জায়গার ওপর পুকুরটির অবস্থান। খননের পর থেকে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা পুকুরটি তাঁদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে আসছেন।

শরণখোলায় পানিসংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলছেন, রায়েন্দা বাজারসংলগ্ন এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ এই পুকুরের ওপর নির্ভরশীল। জরুরি ভিত্তিতে পুকুরটি খনন করা প্রয়োজন। অথচ সেটি না করে মার্কেট (বিপণিবিতান) নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রায়েন্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার বলেন, স্থানীয় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ শিক্ষার্থী এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পুকুরের ওপর মার্কেট বা ঘর নির্মিত হলে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। পানির কষ্টে ভুগবে শিক্ষার্থীরা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলার রায়েন্দা পুকুরের দক্ষিণ পাশে আধপাকা ঘর নির্মাণের জন্য সাতজনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ইজারার একটি চিঠির অনুলিপি ইউএনওর কাছে এসেছে।

জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু পানির সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত, পুকুরের ওপর মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।