চুরির পর নিজের হাত-পা বেঁধে ব্যাংক ডাকাতির নাটক সাজান নৈশপ্রহরী

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কোচাশহর শাখা থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সংবাদ ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কোচাশহর শাখার নৈশপ্রহরী চুরির পর নিজের হাত-পা নিজেই বেঁধে ব্যাংক ডাকাতির নাটক সাজান বলে পুলিশ দাবি করেছে। আজ সোমবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে সংবাদ ব্রিফিং করে এমন কথা জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামাল হোসেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, ব্যাংকের নৈশপ্রহরী গোলাম হোসেন (৩৭) ভল্ট খুলে ১৪ লক্ষাধিক টাকা চুরি করেন। এরপর নিজের হাত-পা নিজেই বেঁধে ফেলেন। এভাবেই ব্যাংক ডাকাতির নাটক সাজান তিনি। পরের দিন সকালে ঝাড়ুদার এসে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে গোলাম হোসেনের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর সেই নাটকের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। পরে ১২ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার ও নৈশপ্রহরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ সড়কের কোচাশহর বাজারে ব্যাংক শাখাটি অবস্থিত। গত বৃহস্পতিবার শাখা ব্যবস্থাপক জেসমিন আকতার ব্যাংকের ভোল্ট ও ব্যাংক শাখা বন্ধ করে বাড়ি যান। যাওয়ার সময় তিনি ব্যাংকে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০০ টাকা রেখে যান। গতকাল রোববার সকালে ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাখা ব্যবস্থাপককে কল করে জানান যে ব্যাংক শাখার প্রধান গেটের তালা খোলা। খবর পেয়ে শাখা ব্যবস্থাপক ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, ভেতরে চেয়ার-টেবিল এলোমেলো এবং ভল্টের তালা খোলা। এ সময় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শাখা ব্যবস্থাপক নৈশপ্রহরীকে দেখেন। কিন্তু তাঁর শরীরের কোথাও কোনো আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন নেই। পরে শাখা ব্যবস্থাপক গোবিন্দগঞ্জ থানায় খবর দেন।  

খবর পেয়ে পুলিশ ব্যাংকে গিয়ে নৈশপ্রহরী গোলাম হোসেনের হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয় এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার নৈশপ্রহরী গোলাম হোসেনের বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শ্রীপতিপুর গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থতার ভান করেন। পরে ব্যাংক কর্মকর্তা ও উপস্থিত লোকজনের সামনে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নৈশপ্রহরী গোলাম হোসেন টাকা চুরি ও নাটক সাজানোর কথা সবার সামনে স্বীকার করেন। তিনি কৌশলে ভল্টের তালা খোলেন। পরে ভল্ট থেকে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা চুরি করে নিজেই নিজের হাত-পা বেঁধে ব্যাংক ডাকাতির নাটক সাজান।

এ ঘটনায় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জেসমিন আকতার বাদী হয়ে নৈশপ্রহরীকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।

মামলা হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে নৈশপ্রহরীর গ্রামের বাড়ি ও ব্যাংকের কোচাশহর শাখায় তাঁর শয়নকক্ষ থেকে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। চুরি যাওয়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬০ টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি। ব্যাংকে রক্ষিত মোট টাকার মধ্যে বাকি ৩৬ হাজার ৫৪০ টাকা (কয়েন ও নোট) ভল্টে রক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়।