সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন হবিগঞ্জের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট

শাহ এ এম এস কিবরিয়া

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন হবিগঞ্জের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুর রহমান বিশ্বাস। তিনি মামলার তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন। আজ রোববার দুপুরে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহাদাত হোসেন প্রামাণিকের আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ সময় আদালতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ অভিযোগপত্রভুক্ত কয়েকজন আসামি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানো হয়েছিল।

সরকারি কৌঁসুলি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ আদালতে হবিগঞ্জের তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমানে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রহমান বিশ্বাস আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি ১৬৪ ধারায় মামলার তিন আসামি জয়নাল আবেদীন মুমিন, জমির আলী, তাজুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন। তিনি মামলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ওই তিনজন কীভাবে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দেন তিনি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কিবরিয়া হত্যা মামলার ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ মার্চ।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে আদালতে আসামি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিঠু, বদরুল আলম ওরফে মিজান, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমেদ, মুফতি মইন উদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মুফতি আবদুল হাই, জয়নাল আবেদীন ওরফে জালাল, মো. আয়াত আলী, জমির আলী, তাজুল ইসলাম, কাজল মিয়া, আবদুল জলিল, এ কে এস আবদুল কাইয়ুম ও জয়নাল আবেদীন মুমিন উপস্থিত ছিলেন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে একটি জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত এবং ৭০ জন আহত হন। ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলার পুনঃ তদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত ব্যক্তির পরিবার।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।