ছোট্ট জীবনকে উপভোগের বার্তা দিয়েছিলেন আল আমীন, ৭ ঘণ্টার মাথায় দুর্ঘটনায় গেল প্রাণ

আল আমীন
ছবি: সংগৃহীত

‘স্বল্প সময়ের জীবনকে অবহেলায় নষ্ট না করে উপভোগ করার জন্য’ প্রেরণামূলক একটি লেখা গতকাল বুধবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন ময়মনসিংহের যুবক আল আমীন (৩০)। এর প্রায় সাত ঘণ্টার মাথায় নরসিংদীর হাঁড়িখোলা রেলক্রসিংয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

আল আমীন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী মো. আবদুর রশিদের ছেলে। তিনি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি নিজ গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আল আমীনের অকালমৃত্যৃ নিয়ে তাঁর বন্ধুবান্ধব ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আল আমীনের বন্ধু সাইফুদ্দিন পরাগ নরিসংদী সদর হাসপাতালে ছুটে যান। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একটি দাওয়াতে অংশগ্রহণ করার পর গতকাল বুধবার রাতে আল আমীন চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন। মাইক্রোবাসে তাঁর সঙ্গে রেস্তোরাঁমালিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে নরসিংদীর হাঁড়িখোলা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গেলে ভেতরে থাকা আরোহীরা গুরুতর আহত হন। আল আমীন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সাইফুদ্দিন পরাগ জানান, তাঁর মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর মরদেহ নিয়ে তাঁরা ঈশ্বরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জের রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মানিক মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আল আমীন ছিলেন এলাকার তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। এ ধরনের মৃত্যু তাঁর বন্ধুবান্ধব মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় তিনিও শোকাহত।

মৃত্যুর আগে গতকাল বেলা তিনটার দিকে ‘কতটুকু বাঁচাবেন?’ শিরোনামে একটি প্রেরণামূলক লেখা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন আল আমীন। সেখানে লেখা ছিল, ‘...টিক টিক করে সেকেন্ড কিন্তু চলে যাচ্ছে। মৃত্যু খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে। আপনার আয়ু যদি হাজার হাজার বছর হতো, তাহলে সময়ের বিলাসিতা আপনাকে মানাত।...পচা ব্যাপার–স্যাপারগুলোতে সময় নষ্ট না করে বই পড়ুন। টুক করে বেড়িয়ে আসুন চমৎকার কোনো জায়গা থেকে। ভালো বই পড়ুন, ভালো কাজ করুন। রাতের আকাশ দেখুন। ভোরের সূর্যোদয় দেখুন...’

এলাকার বাসিন্দা ও আল আমীনের বন্ধু মো. জাকির মোল্লা বলেন, ‘আল আমীন অমায়িক ও মানবিক মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর ব্যবহার দিয়ে অল্পতে মানুষের মন জয় করে নিতেন। ভালো কাজে তাঁকে সব সময় পাশে পাওয়া যেত। করোনাকালীন তিনি উপজেলা প্রশাসনের গঠন করা স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সদস্য হিসেবে মাঠে কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।’