‘যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করুন’
‘আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হইছে। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের মারধর করেনি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি, দোয়া কইরো।’
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান (৪৫) গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সর্বশেষ স্ত্রী মেহরিমা সাফরিন জামানকে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন। আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে একটি ভয়েস রেকর্ড বার্তা আসে মেহরিমার মুঠোফোনে। সেই বার্তায় একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি জানান, ‘স্যার ভালো আছেন। সাহ্রি করে স্যার এখন ঘুমাচ্ছেন। কোনো মেসেজ থাকলে এই নম্বরে এসএমএস পাঠাবেন।’
স্বামীকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা মেহরিমা সাফরিন বলেন, জাহাজের কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় গভীর সমুদ্রে গেলে ১৫-২০ দিন ধরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকত না। তখন চিন্তা হতো। নেটওয়ার্কের মধ্যে এলেই তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হতো। কিন্তু এবারের ঘটনাটি অনেক উদ্বেগের। তাঁরা জলদস্যুদের কবলে পড়েছেন। খবরে দেখছেন, মুক্তিপণ না পেলে তাঁদের নাকি মেরে ফেলবে। এ অবস্থায় তিনি চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাচ্ছেন। এক বছরের মেয়ে আর অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারছেন না।
মেহরিমা সাফরিন বলেন, ‘সরকার ও জাহাজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুতি, যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’
আজ দুপুরে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ এলাকায় প্রকৌশলী সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী, বাবা আবদুল কাইয়ুম ও মা কহিনুর বেগমের সঙ্গে কথা হয়। সাইদুজ্জামানের বাবা আবদুল কাইয়ুম নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। তিনি বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমার ছেলের নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন করে জানায়, তাদের জাহাজে জলদস্যুরা অ্যাটাক করেছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর গতকাল রাতে একবার, আজ সকালে আরেকবার অন্য নম্বর থেকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়েছে। ভয়েস এসএমএসে জানিয়েছে, সে ভালো আছে। দস্যুরা কোনো মারধর করেনি। একটি ঘরে তাদের সবাইকে আটকে রাখা হয়েছে। জাহাজে খাওয়ার পানির সংকট থাকায় তাদের খুব কম পরিমাণে পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে।’
সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছেন। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ এস আর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।
মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।