পিরোজপুরে নেতার হুমকির পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত, জেপি নেতা আত্মগোপনে

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। গত শনিবার রাতে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

আলোচিত পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান গাজীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদার এ ঘোষণা দেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জেপি) মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার দেলোয়ার হোসেনসহ আর দুজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। আগের রাতে হুমকি পাওয়ার পর তাঁরা আর মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। ১৮ জুন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সিকদার দেলোয়ার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সিদ্দিকুর রহমান গাজী
ছবি: সংগৃহীত

১৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ জেপি প্রার্থী সিকদার দোলোয়ার হোসেনকে প্রার্থী না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দেন। কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘এখানে অনেক বক্তা বলেছেন, আমরা কাউখালী থেকে সাইকেল (জেপির দলীয় প্রতীক) বিতাড়িত করতে চাই। শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নয়। আগামী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আমরা সাইকেলকে বিতাড়িত করব। শেখ হাসিনা নৌকা দিছে। আবার ইলেকশন কিসের? আর ইলেকশন যদি হয়, বুঝিয়ে দেব ইলেকশন কাহাকে বলে।’

ওই সভায় মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা অপর দুই প্রার্থী শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রহমাতুল্লাহ ও মহিউদ্দিন নামের এক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা না দিতে অনুরোধ করে বলেন, ‘আমার কেন যেন মনে ডাক দেয় সিদ্দিক (নৌকার প্রার্থী) ছাড়া কেউ আর প্রার্থী থাকবে না।’

আরও পড়ুন

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, শিয়ালকাঠি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। ১৮ জুন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান গাজী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় তাঁকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

জেপির সিকদার দোলোয়ার হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা জেপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিঞা বলেন, ১৮ জুন দুপুরে জেপি প্রার্থী সিকদার দেলোয়ার হোসেন হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে আবু সাঈদ মিঞা বলেন, নানা ধরনের কথাবার্তা ও ভয়ভীতির কারণে সিকদার দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তাঁর পক্ষে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেপি নেতা বলেন, পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে তাঁর এক সময়ের সহকারী একান্ত সচিব জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের বিরোধ চলছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান মহিউদ্দিন মহারাজ। মহিউদ্দিন মহারাজ চেয়েছিলেন জেপি প্রার্থীকে যেকোনোভাবে পরাজিত করতে। এটাকে মহিউদ্দিন মহারাজের অনুসারীরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরাজয় দেখছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান গাজী বলেন, জেপির চেয়ারম্যান প্রার্থী বুঝতে পেরেছিলেন তিনি পরাজিত হবেন। এ জন্য তিনি মহিউদ্দিন মহারাজের সঙ্গে সমঝোতা করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। তাঁকে কোনো হুমকি বা ভয়ভীতি কিছুই দেখানো হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমান গাজী ২০০৩ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর দুটি ইউপি নির্বাচনে তিনি সিকদার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের পর সিদ্দিকুর রহমান গাজী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবর শিয়ালকাঠি ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামি তিনি। এই মামলার বিচারকাজ আদালতে চলমান।