পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দাড়ছিড়া নদীর তীরের মাটি কেটে হচ্ছে মাছের ঘের 

জোয়ারের সময় নদীর পানির স্রোতে যাতে ঘেরের মাটি ধুয়ে না যায়, এর জন্য পলিথিন দিয়ে বাঁধ ঢেকে রাখা হয়েছে। 

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দাড়ছিড়া নদীতীরের মাটি কেটে হচ্ছে মাছের ঘের। বাঁধ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দাড়ছিড়া নদীর তীর থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে একের পর এক মাছের ঘের। দেওয়া হচ্ছে মাটির বাঁধ। জোয়ারের সময় নদীর পানির স্রোতে যাতে মাটি ধুয়ে না যায় এর জন্য পলিথিন দিয়ে বাঁধ ঢেকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, এভাবে মাছের ঘের করায় সামনের বর্ষায় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা ও ভাঙন দেখা দেবে।

বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে আগুনমুখা নদীতে মিলিত হয়েছে দাড়ছিড়া নদী। উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর তোজাম্মেল ও চর ইমালশস এবং বড় বাইদিয়া ইউনিয়নের চর হালিম ও চর গঙ্গা এলাকার দাড়ছিড়া নদীতীরের ভূমি দখল করে এসব মাছের ঘের করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, নদ-নদী ও প্রবহমান খালের পাড়ের তীরভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ কেউ করতে পারে না। এটা আইনিভাবে বৈধ নয়। তিনি আরও বলেন, নদীর তীরের জমি মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে দখল করলে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাবে। অস্তিত্ব হারাবে নদী। আগে নদী রক্ষা করতে হবে। 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বড় বাইশদিয়া এলাকায় নদীর তীর থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে মাছের ঘের করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, এখানে ঘের আগেই করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সেটি মেরামত করা হচ্ছে। ছোট বাইশদিয়ার কোড়ালিয়া এলাকায় দাড়ছিড়া নদীমুখ এলাকাতেও মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে ঘের করা হয়েছে। জোয়ারের সময় নদীর পানির স্রোতে যাতে ঘেরের মাটি ধুয়ে না যায়, এর জন্য পলিথিন দিয়ে বাঁধ ঢেকে রাখা হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর ইমালশন এলাকায় দাড়ছিড়া নদীতে জেগে উঠেছে এ নতুন চর। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত না নিয়েই দখলদারেরা নদীর তীর দখলে নিচ্ছেন। এই নদীর দক্ষিণে বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর হালিম ও চর গঙ্গা এলাকার নদীর তীরসংলগ্ন বাড়ির মালিকেরা জমি নিজেদের দাবি করে ঘের করছে। এই ঘেরের কারণে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। 

এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামাল জানান, তাঁদের এলাকায় তরমুজ আর মাছ চাষ করে লোকজনের সংসার চলে; কিন্তু মাছের ঘের যেভাবে করা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এখন নদীর তীরভূমি দখল করে ঘের করা হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে। 

উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের এক জরিপকারী সার্ভেয়ার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দাড়ছিড়া নদীর তীরভূমির প্রায় এক হাজার একরের মতো দখল করে মাছের ঘের করা হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাছের ঘের করে নদীর তীর দখলের সঙ্গে মজিবুর রহমান নামের একজন জড়িত আছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই নদীর তীরের মাটি কেটে ঘের করেছে। আমিও করেছি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে আমার ঘের বিধ্বস্ত হয়েছে। আমি এখন ঘের ছেড়ে দিয়েছি। আমি আর এভাবে ঘের করব না।’ 

বেল্লাল গাজী ও রিয়াজ হাওলাদার নামের অপর দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, তাঁরা নিজেদের জমির ওপর ঘের করেছেন বলে দাবি করেছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আসলে নদীর তীরভূমিতে মাটি কেটে মাছের ঘের করা এটা অবৈধ। কোনোভাবেই সরকারের খাসজমিতে এভাবে মাছের ঘের করা যাবে না।