খুলনার কয়রা উপজেলা বিএনপির তিন মাসের জন্য গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ৩ বছর চলার পর আবার ৪৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করে বারবার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়ায় এবং ত্যাগী নেতাদের ওই কমিটিতে না রাখায় দলের একাংশের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান ও সদস্যসচিব মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত নতুন কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়। নুরুল আমিন, এম এ হাসানসহ ৮ জনকে করা হয় যুগ্ম আহ্বায়ক। ওই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন বছরেও তা সম্ভব হয়নি। 

কয়রা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ সালাউদ্দিন লিটন বলেন, এর আগে যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে তিন বছরে একটি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করতে পারেননি, আবার তাঁদেরই আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করে দায়িত্ব দেওয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মূলত নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দলের কিছু নেতার পকেট ভারী হয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর দলের ত্যাগী নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ। যাঁরা কখনোই বিএনপি করেননি, কখনো কোনো আন্দোলন–সংগ্রাম করেননি, তাঁরাই আজ বিএনপির নেতা। যাঁরা ওয়ার্ড পর্যায়েও নেতৃত্বের যোগ্য নন, তাঁদেরও যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে, আর জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান বলেন, ‘আমি আগের কমিটির ৩ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম, এবার ষড়যন্ত্র করে আমাকে কমিটির ৫ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে অরাজনৈতিকদের প্রাধান্য দিয়ে ত্যাগীদের পরিকল্পিতভাবে বাদ দেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে একজন ব্যর্থ ও আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ব্যক্তিকে সদস্যসচিব করে কয়রার বিএনপিকে ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। গত তিন বছরে তিনি বিএনপির জন্য কিছুই করতে পারেননি। দল গোছানোর পরিবর্তে বিএনপিকে দু-তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। আবার তাঁকেই সদস্যসচিব করা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে গেল।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নতুন কমিটির সদস্যসচিব নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দলের হয়ে কাজ করেছি। এ কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করে সদস্যসচিব করেছে। আগের কমিটির যাঁরা নিষ্ক্রিয় ও সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন, নতুন কমিটিতে তাঁদের সেভাবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় পুনরায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয়েছে। আমরা আগের মেয়াদে বিভিন্ন কারণে কয়রার সাতটি ইউনিয়নে কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারিনি। নতুন করে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা আবার সে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করছি, শিগগিরই কমিটি গঠন শেষ হবে।’

নতুন আহ্বায়ক কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা বিএনপির নেতারা যাঁকে যেখানে যোগ্য মনে করেছেন, সেখানে রেখেছেন। আমি যুবদল থেকে মূল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন কথা বলছেন। তবে আমি মনে করি, দলের জন্য আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করা হয়েছে। নবীন–প্রবীণ নেতাদের সমন্বয়ে একটি সময়োপযোগী আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে।’

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান বলেন, ‘কয়রা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরে অনেকেই সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়নের কথা বলছেন। তবে আমরা এক মাসের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন করতে চাচ্ছি। আশা করছি মূল কমিটি গঠনের সময় এই বিতর্ক আর থাকবে না।’