খেলার মাঠে শিশুসন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা–বাবা

রিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় প্রচণ্ড গরমে ফুটবল খেলার মাঠে মারা যাওয়া রিয়া আক্তারের মা–বাবা মেয়ের শোকে পাগলপ্রায়। একমাত্র শিশুসন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর এই দম্পতি। স্বজন ও প্রতিবেশীদের সান্ত্বনাও তাঁদের বিলাপ থামাতে পারছে না।

রিয়া আক্তার (১০) উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ছুনুটিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও রেজিয়া আক্তারের মেয়ে। সে ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, সম্প্রীতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩–এর ইউনিয়ন পর্যায়ের খেলা শুরু হয়। গত সোমবার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বিমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে খেলা ছিল। ওই দিন বেলা দুইটায় দ্বিমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে খেলা শুরু হয়। প্রচণ্ড গরমে রোদের মধ্যে খেলতে গিয়ে রিয়া আক্তার মাঠে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রিয়া অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিসহ আয়োজকেরা মাঠে ছুটে যান। তাঁরা রিয়ার মাথায় পানি ঢালেন। এতেও তার জ্ঞান ফেরেনি। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ছুনুটিয়া গ্রামে রিয়া আক্তারের বাড়িতে খবরটি পৌঁছালে মাতম শুরু হয়। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন দেলোয়ার ও রেজিয়া দম্পতি। তিন দিন পরও থামছে না তাঁদের বিলাপ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দেলোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা মেয়েটা এইভাবে চইলা যাবে, কল্পনাও করতে পারি নাই। আল্লাহ, এ তুমি কী করলা! এহন আমরা কী নিয়া বাঁচুম।’

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মজনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রিয়া আক্তারের বাবা লেপ–তোশক তৈরির কাজ করেন। মেয়েকে নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। রিয়ার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মা–বাবা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৃহস্পতিবার রিয়া আক্তারের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাঁরা রিয়ার মা–বাবাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এ ছাড়া ইউএনও রিয়ার মা–বাবাকে ২০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, দুপুরে রোদের তাপ বেশি থাকে। তাই এখন সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে এ টুর্নামেন্টের খেলা শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।