গণ–ইফতারে প্রথমে ছাত্রলীগের বাধা, পরে ‘পাহারাদার’ হিসেবে অংশগ্রহণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ–ইফতার কর্মসূচি। বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির ওপর ‘বিধিনিষেধ’ আরোপের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বুধবার গণ–ইফতার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রশিবির-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে প্রথমে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে বাধা দিলেও পরে ‘পাহারাদার’ হিসেবে তাঁরা অংশ নেন।

আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গণ–ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু) ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেল পাঁচটায় শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা গণ–ইফতার কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসতে থাকেন। তখন শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতা শিক্ষার্থীদের জানান, ‘গণ–ইফতার হবে না’। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন গণ–ইফতার কর্মসূচির আহ্বায়ক জায়িদ হাসান জোহা। এরপর শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা তাঁকে (জোহা) শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চের পেছনে নিয়ে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে দুই ছাত্রলীগ নেতা গণ–ইফতার কর্মসূচির আয়োজন শুরু করতে বলেন। এরপর শামিয়ানা বিছিয়ে গণ–ইফতার শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ইফতার পার্টি শেষে কর্মসূচির আহ্বায়ক জায়িদ হাসান জোহাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে ছাত্রলীগের নেতারা নিয়ে যেতে চান। তখন শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান ও গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস তাঁদের বাধা দেন। কিন্তু তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোহাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। তখন দুই শিক্ষক তাঁদের বলেন, ‘জোহাকে তোমাদের জিম্মায় ছেড়ে দিলাম। ওর কিছু হলে তোমাদের দায়ভার নিতে হবে।’ পরে জোহাকে নিয়ে শেরে বাংলা হলসংলগ্ন দোকানের পেছনে নিয়ে যান ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক। সেখানে জোহার সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন তাঁরা। এরপর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে রাত ১০টায় বুদ্ধিজীবী চত্বরে দেখা করতে বলেন। এরপর জোহা রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান।

এ বিষয়ে জোহার বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করলে বন্ধু পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘জোহা সারা দিনের ধকল নিতে পারেনি। এ ছাড়া ইফতারের সময় ঝামেলার কারণে ঠিকমতো ইফতারও করতে পারেনি। এ কারণে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’

এর আগে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির ওপর ‘বিধিনিষেধ’ আরোপ করার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়িদ হাসান জোহা নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গণ–ইফতার কর্মসূচির ডাক দেন এবং এ বিষয়ে ‘ব্যানার’ তৈরি করে প্রচার করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সকলে সাধ্য অনুযায়ী ইফতারি আনার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি অর্থনৈতিক অংশগ্রহণও করতে পারবেন।’

ইফতারের আগে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমরা গণ–ইফতার নামে একটি আয়োজন দেখতে পাই। বিষয়টি প্রশাসন ও ক্রিয়াশীল কোনো সংগঠন জানত না। এখানে এসে দেখলাম, অনেক জটলা। শিক্ষার্থীরা ইফতার করবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছি, যাতে ক্যাম্পাসে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। ক্যাম্পাসের পাহারাদার হিসেবে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান করছি।’

আসাদুল্লা-হিল-গালিব আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, আজ ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকী। তারা নামে-বেনামে আজ ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করবে। গণ–ইফতার কর্মসূচির আহ্বায়ক জোহা এর সঙ্গে জড়িত কি না, তা জানি না। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, সে জড়িত না। আপাতত আমরা সবাই একসঙ্গে ইফতার করব। তারপর জোহার সঙ্গে আবার কথা হবে।’

ইফতার শুরুর আগে জায়িদ হাসান জোহা নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সাহ্‌রি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির ওপর হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। সম্প্রতি দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরাও গণ–ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছি। তবে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা বিষয়টি না জানিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছে। এখন ভাইয়েরা মিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইফতার করতে বসেছি। কোনো বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’

কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘জোহা নামের একজন ছেলে আমাকে কল দিয়ে দাওয়াত দিয়েছে। তারপর আরেকজন কল দিয়ে বলল, একটা সংগঠনের ছেলেরা আমাদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না। সেটি শুনেই মূলত এখানে এসেছি। পরে এসে দেখলাম ঝামেলা মিটে গেছে।’ ইফতার শেষে ঝামেলার বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতারা জোহাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করছিল। তখন তাকে দেখে মনে হলো, অনিরাপত্তা বোধ করছে। তাই তাকে শিক্ষকের বাইকে মেসে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তারা জোহাকে জোর করে নিয়ে যায়।’