তিতাসের বন্ধ কূপে গ্যাস উত্তোলন শুরু, দৈনিক উঠবে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট

তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১৪ নম্বর কূপ সংস্কারের পর আবার গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১৪ নম্বর কূপের সংস্কারকাজ (ওয়ার্কওভার) শেষে আবার গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর কূপটি থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম সরবরাহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তিতাসের ১৪ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ১ কোটি থেকে ১ কোটি ২০ লাখ (১০ থেকে ১২ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। আগামী ১০ বছরে কূপটি থেকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতাধীন তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ২৩টি কূপ থেকে প্রতিদিন ৩৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। কিন্তু পানি ওঠাসহ নানা কারণে চারটি কূপের উৎপাদন বন্ধ আছে। এ ছাড়া দেশের আরও কয়েকটি কূপ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ। এমতাবস্থায় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা গ্যাসক্ষেত্রের বন্ধ থাকা সাতটি কূপ সংস্কারের জন্য ৫২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় বিজিএফসিএল।

বিজিএফসিএল সূত্র জানায়, সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থিত ১৪ নম্বর কূপটি ২০০০ সালে খনন করা হয়। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত কূপ থেকে ২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ২০০৯ সালে গ্যাসের সঙ্গে পানি আসায় কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংস্কার করে একই বছরে উৎপাদনে আসে। এরপর ২০২০ সালে আবার পানি এলে সরবরাহ কমে যায়। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের ১৯ মার্চ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কূপটি সংস্কারের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। সংস্কার শেষে গত মঙ্গলবার রাত থেকে কূপ থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।

সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে বন্ধ সাতটি কূপের সংস্কার শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া উৎপাদনে থাকা চারটি কূপের উৎপাদন ধরে রাখতে মেইনটেন্যান্স করতে হবে। প্রায় ৫৫ বছরে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের কূপগুলো থেকে প্রায় সাড়ে ৫ টিএসএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। তবে কূপগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে খনন ও সংস্কার মিলিয়ে ১০০টি কূপের প্রোগ্রাম রয়েছে। যেটা ২০২৬ সালে শুরু করার চিন্তাভাবনা ছিল, সেটা আমরা ২০২৫ সাল থেকে শুরু করব। এই লক্ষ্যে আমরা পুরোদমে কাজ করছি, যাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।’

ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক ইসমাইল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। সেই হিসাবে ১৪ নম্বর কূপ থেকে আগামী ১০ বছর ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। গ্রাহক পর্যায়ে যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাকি ছয়টি কূপের ওয়ার্কওভারের কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে তিনি জানান।