‘পা টিপি বাঁশের ওপর দিয়া যাওয়া-আসা করি’

সাঁকোটিতে কেবল হেঁটে চলাচল করা যায়। অসতর্ক হলেই সাঁকো থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঘাঘট নদ পার হচ্ছেন লোকজন। সম্প্রতি রংপুর নগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রংপুর সিটি করপোরেশনের বনগ্রাম এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেতু আর নির্মাণ করা হয়নি। এর ফলে দুই দিকের পাঁচ গ্রামের মানুষ সাঁকো বানিয়ে পার হচ্ছে। সাঁকোটিও ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁশের খুঁটির ওপর আড়াআড়ি বাঁশ ফেলে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। কেবল হেঁটে চলাচল করা হয়। অসতর্ক হলেই সাঁকো থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এই দুর্ভোগের চিত্র রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম এলাকায়। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাঘট নদের পূর্ব-পশ্চিম দিকে পাঁচটি গ্রাম অবস্থিত। এগুলো হলো ডারারপার, ছিলিমপুর, দক্ষিণপাড়া, বয়েজপাড়া ও বনগ্রাম। পাঁচটি গ্রামে প্রায় চার হাজার পরিবারের বাস। পশ্চিম দিকের চার গ্রামের মানুষের বাজারসহ যাবতীয় কাজে নদ পার হতে হয়। ঘাঘট নদের সাঁকো পারাপারে কম সময় লাগে। আর তা না হলে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে ভুরারঘাট এলাকা দিয়ে শহরে যেতে হয়।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, বনগ্রাম এলাকায় নদের ওপর সাঁকো দিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছে। সাঁকোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট। নদের আটটি স্থানে দুটি করে খুঁটি বসানো। বাঁশের খুঁটির ওপর বাঁশ ফেলে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। বাঁশের ওপর হেঁটে গেলে সেগুলো নড়বড় করে। খুঁটির ওপরের দিকে বাঁশ বাঁধা রয়েছে। সেই বাঁশ ধরে সবাই পারাপার হচ্ছে। সাঁকোর দুই প্রান্ত থেকে দুজন এলে পরস্পরকে অতিক্রম করতে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ভারী কোনো মালামাল নেওয়া যায় না।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁশের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই পা পিছলে নদের মধ্যে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করেন। নদে পানি বেশি না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।

ডারারপার এলাকার শিক্ষক চান মিয়া বলেন, আগে স্থানীয় উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু তা ভেঙে গেছে। এখন একটি বাঁশের ওপর দিয়ে আরেকটি বাঁশ ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে একাধিকবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

বয়েজপাড়া এলাকার কীটনাশক ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই বাঁশের ওপর দিয়েই যাওয়া-আসা করতে হয়। পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। পা টিপি-টিপি একটা বাঁশের ওপর দিয়া প্রতিদিন যাওয়া-আসা করি।’

বনগ্রামের কৃষক রোস্তম আলী বলেন, ‘সাঁকোর ওপর দিয়ে মালামাল নিয়া যাওয়া যায় না। অটোরিকশা ভাড়া করিয়া অনেক দূরের পথ ঘুরি যাওয়া লাগে।’

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ১ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে রংপুর নগরের ২৩টি সেতু রয়েছে, যার মধ্যে ঘাঘট নদের ওপর ৮টি সেতুও রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আসবে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নগরের যেসব স্থানে জনগণের চলাচলে অসুবিধা ও ভোগান্তি হচ্ছে, সেসব এলাকায় সেতু নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়ন শুধু সময়ের ব্যাপার।