আজ রোববার সকালে কয়রা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা স্মৃতিসৌধে ফুল দেন
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলা বিএনপির দুই নেতার দ্বন্দ্বের জেরে মহান স্বাধীনতা দিবসে আজ রোববার শহীদ বেদিতে পৃথক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়েছে। এতে কয়রা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও স্পষ্ট এসেছে। জাতীয় দিবসে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমীন বাবুল ও  আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান পৃথকভাবে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোয় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর আগেও দুই নেতা পৃথক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলা বিএনপির আট সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালে। তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গত দুই বছরেও তা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক চাপ ও পেশাগত কারণে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম এলাকায় থাকেন না। মাঝেমধ্যে দলের বড় কর্মসূচিতে আসেন। এ অবস্থায় যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমীন বাবুল ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে তাঁরা পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন। একই সঙ্গে নিজ নিজ অনুসারী বাড়ানোরও চেষ্টা করছেন তাঁরা।

আজ সকালে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমীনের নেতৃত্বে কয়রা উপজেলা পরিষদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মোতাছিম বিল্লাহ, উপজেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান, শ্রমিক দল নেতা গোলাম মোস্তফা, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে অপর যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসানের নেতৃত্বে একই স্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কোহিনুর আলম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আকবর হোসেন, আসাদুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, কৃষক দলের আহ্বায়ক গোলাম রসুল, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

এ বিষয়ে এম এ হাসান বলেন, দীর্ঘদিন দলীয় পদ-পদবি এক কেন্দ্রিক হয়ে আছে। এর পরিবর্তন চান কর্মী-সমর্থকেরা। অনেকেই দলের এক যুগ্ম আহ্বায়ককে পছন্দ করেন না। যে কারণে দলীয় কর্মসূচিতে আলাদাভাবে অংশ নেন তাঁরা। বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।

কয়রা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসানের নেতৃত্বে আজ রোববার সকালে নেতা-কর্মীরা স্মৃতিসৌধে ফুল দেন
ছবি: প্রথম আলো

তবে নুরুল আমীন বাবুল বলেন,‘ যাঁরা আমাদের বাইরে আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করছে, তাঁরা মূলত দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের এজেন্ট। এরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসানের সহযোগী উপজেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের আপন ভাই কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান। বিএনপি নেতা এখন ওই এলাকার নিয়মিত সালিস করছেন। তিনি দলের মধ্যে থেকেও আওয়ামী লীগের হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করে যাচ্ছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় মূলত তাঁরা আমাকে অপছন্দ করছেন।’

তবে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমীন বাবুলই মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য রেখে চলেন। তিনি যেখানে বসবাস করেন, সেখান থেকেই কয়রার আওয়ামী লীগের বিস্তার হয়েছে। তাঁর সঙ্গে যাঁরা বিএনপির দল করেন, তাঁদের অধিকাংশ বিগত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার হয়ে কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ভাইয়ের আগে ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলাম। এ কারণে মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এলে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে সমাধানের চেষ্টা করি।’

কয়রা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এক যুগে এ উপজেলায় বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। ২৫টির মতো মামলায় তাঁরা আদালতে আজও হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি খুলনা শহরে থেকে এসব মামলার নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় সবাইকে যেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার, সেখানে গুটি কয়েক নেতা পদ-পদবির নেশায় দলের মধ্যে বিভেদের চেষ্টা করছেন। তাঁদের দলীয় শৃঙ্খলায় ফেরানোর চেষ্টা চলছে।