রাজশাহীর পবায় পতিত চরে ১৬ ফসলের চাষ

টমেটো, কপি, পেঁয়াজ, সূর্যমুখী ফুল, লাউ, পটোল, গম, মরিচ, খেসারি, কলা, মুলা, ভুট্টা চাষ হচ্ছে।

টমেটো তুলে খেতের পাশে জড়ো করা হচ্ছে। সম্প্রতি পবার কসবা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চার বছর আগেও পদ্মার চরটিতে লোকজন বড়জোর ধৈঞ্চার বীজ ছিটিয়ে রাখতেন। পরে ওই গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন। ভাঙনের আশঙ্কায় সেখানে কৃষকেরা ফসলের আবাদ করতেন না। কিন্তু এখন সেই চরে চাষ হচ্ছে ১৬ রকমের ফসল। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ওই এলাকার প্রায় ৮০০ কৃষক।

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কসবা মৌজায় ওই চরের অবস্থান। সম্প্রতি ওই চরে গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে টমেটো তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। গাড়ি বোঝাই করে টমেটো নেওয়া হচ্ছে। টমেটো তোলা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন নজরুল ইসলাম।

এক ফাঁকে এই চরে চাষাবাদের গল্প তুলে ধরেন। তিনি জানান, কসবা গ্রামের কৃষক সাবান মোল্লা চার বছর আগে এই চরে প্রথম টমেটো চাষ শুরু করেন। প্রথমবার ফলন ভালো হয়নি। পরেরবার তিনি ভালো ফলন পান। তাঁর দেখাদেখি তিনিও (নজরুল) টমেটো চাষ শুরু করেন। তাঁরও প্রথমবার টমেটোর ফলন ভালো হয়নি। পরেরবার দারুণ ফলন পেয়েছেন।

পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো ছিল। দুই বিঘায় ভুট্টা, সাত বিঘায় ধান ও এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি।
আজিম মণ্ডল, কৃষক

নজরুল ইসলাম এবার টমেটো, কপি, পেঁয়াজ, সূর্যমুখী ফুল, লাউ, পটোল, গম, মরিচ, খেসারি, কলা, মুলা, ভুট্টা ও শসা চাষ করেছেন। তিনি তাঁর একটি জমি দেখালেন, যেখানে প্রথমে পাট চাষ করেছিলেন। পাট কেটে নেওয়ার পর টমেটো চাষ করেছেন। টমেটো ওঠার আগেই খেতের ভেতর পটোলের চারা রোপণ করে দিয়েছেন। এখন টমেটোর মাচাতেই নতুন পটলের গাছ উঠছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, এই মৌসুমে তাঁর টমেটোতেই খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এখনো খেতে টমেটো রয়েছে। এবার শীতের কারণে গাছের ক্ষতি হয়েছে। তা না হলে টমেটোর ফলন আরও বেশি হতো। ১২ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আবাদ করছেন। শুরুতে এই চরে প্রতি বিঘা জমি বছরে তিন হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। এখন সেই জমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ইজারা হাঁকছেন জমির মালিকেরা।

পাশের পেঁয়াজখেতে কাজ করছিলেন একই গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম। তাঁর এক বিঘার টমেটো বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কপি চাষ করেছেন ১৫ কাঠা জমিতে। কপিতেও ভালো লাভ হয়েছে। এখন আবার পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। তাঁরও নিজের কোনো জমি নেই। রেজাউল বললেন, ‘এবার ২০ হাজার টাকার কমে জমি পাওয়া যাবে না। ভালো ফসল দেখে জমির মালিকেরাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।’

গত বছর এই মাঠের টমেটো বিক্রি করতে রাজশাহীতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কৃষক সাবান মণ্ডল। তিনি ১২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেরা এখন সেই জমিতে চাষাবাদ করছেন। সাবান মণ্ডলের ছেলে আজিম মণ্ডল চরে আবাদ করছেন। তিনি বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো ছিল। দুই বিঘায় ভুট্টা, সাত বিঘায় ধান ও এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। পর্যায়ক্রমে খেত থেকে ফসল তুলবেন। এরপর নতুন ফসল চাষ করবেন।

চরের কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন পবা উপজেলার আলীমগঞ্জ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই মাঠে ১ হাজার ৩০০ একর জমিতে প্রায় ৮০০ জন কৃষক চাষাবাদ করেন। তাঁরা ১৬ থেকে ১৭টি ফসল উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন। এখানকার কৃষকদের নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদনের কৌশল শেখানো হয়। যেমন জৈব সারের ব্যবহার, আঠালো হলুদ ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার হাতে–কলমে শেখানো হয়। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার, সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিক বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নতুন প্রযুক্তি যেমন বেড প্লান্টার ব্যবহার করে গম-ভুট্টা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়।