শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করেছে। মাঝনদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সামনে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে খনন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ডুবোচর কেটে প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ চ্যানেল তৈরি করছে বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগ।
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে পানি কমছে। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের মাঝনদীতে ডুবোচর জেগে উঠছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে পানি কমছে। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের মাঝনদীতে ডুবোচর জেগে উঠছে। ডুবোচরের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাটের সামনে গভীরতা কমায় ফেরি ভিড়তে সমস্যা হয়। বিআইডব্লিউটিসি ডুবোচরের মাটি অপসারণ করে নতুন করে নৌ চ্যানেল তৈরি এবং ঘাটের সামনে গভীরতা ঠিক রাখতে সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএকে (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষ) অনুরোধ জানায়। একই সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটটি দ্রুত চালু অথবা বিকল্প স্থানে স্থানান্তরের কথাও জানায়।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বর্ষা শেষে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ ঠিক রাখতে আমরা বিআইডব্লিউটিএকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এক সপ্তাহের বেশি ধরে এ নৌপথের মাঝনদীতে পানির গভীরতা কমে ডুবোচর জেগে ওঠে। এতে দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে ফেরিগুলো যাতায়াত করছে। এতে আগের থেকে অনেক বেশি সময় লাগার পাশাপাশি জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আগে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া যেতে যেখানে একটি ফেরির ২৫ মিনিট সময় লাগত, এখন সেখানে ৪০–৪৫ মিনিট লাগছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়ার সব কটি ঘাটের সামনেও পানি কমছে। ৭ নম্বর ঘাটের কাছে সবচেয়ে বেশি পানি কমতে থাকায় দ্রুত খননের অনুরোধ জানানো হয়।’
আবদুস সাত্তার আরও বলেন, ‘এসব সমস্যার পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা রয়েছে নদীভাঙনের কবলে পড়ে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ রয়েছে। ভাঙনের মাত্রা এত বেশি ছিল যে মূল সড়কের কাছে নদী চলে আসায় ওইখানে ঘাট চালুর বাস্তবতা নেই। এই কারণে ৫ নম্বর ঘাট অন্যত্র স্থানান্তর বা বিকল্প আরেকটি ঘাট চালুর প্রস্তাব করেছি। দ্রুত সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় একটি ড্রেজারের সাহায্যে পলিমাটি অপসারণ করা হচ্ছে। ঘাট থেকে প্রায় ৫০০ গজ ভাটি বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় পাইপের মাধ্যমে পলিমাটি ফেলা হচ্ছে। খননযন্ত্রের পাশ দিয়ে ধীরগতিতে ফেরিগুলো যাতায়াত করছে। বিআইডব্লিউটিএর লোকজন রশির সঙ্গে একধরনের লোহার ভারী যন্ত্র বসিয়ে পানির গভীরতা পরিমাপ করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের খনন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, সাধারণত ফেরি চলাচলের জন্য ১১-১২ ফুট করে গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি কমছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাটের সামনে ১১-১২ ফুট করে পানি থাকলেও আরও ১২ ফুটের মতো কমবে। তখন ফেরি চলাচল অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সমস্যা সমাধানে ৭ নম্বর ঘাটের সামনে আইসল্যান্ডার নামক ব্যক্তিমালিকানাধীন ড্রেজার দিয়ে ৩ নভেম্বর থেকে খনন শুরু হয়েছে।
মাসুদ রানা আরও বলেন, মাঝনদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় ৪ নভেম্বর থেকে ‘বংশী’ নামক বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে পলিমাটি অপসারণ করা হচ্ছে। প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ চ্যানেল তৈরিতে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ঘনমিটার পলিমাটি অপসারণ করা হয়েছে। তবে একটি ড্রেজার দিয়ে খননকাজ ব্যাহত হওয়ায় আগামী দুই-তিনের মধ্যে আরেকটি খননযন্ত্র বসানো হবে।