এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাকবলিত ওই বাসের চালকের সহকারীর বাড়িতে মাতম
পবিত্র শবে বরাতে বাড়িতে এসেছিলেন ইউছুপ আলী শেখ (৪৫)। কথা ছিল রমজান মাস শুরু হলে আবার আসবেন। বাড়ির জন্য কিছু বাজার করে দিয়ে যাবেন। সেই প্রত্যাশা নিয়ে দিন গুনছিলেন ইউছুপ আলীর পরিবারের সদস্যরা। তবে তাড়াহুড়া করে রমজান মাস শুরুর কয়েক দিন আগেই যেন বাড়িতে এলেন ইউছুপ। এসেছেন ঠিকই, তবে নিথর লাশ হয়ে।
ইউছুপ আলী শেখ গত রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালকের সহকারী ছিলেন ইউছুপ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে স্বজনেরা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ইউছুপের বাড়ি পাবনার সুজানগর পৌর এলাকার ভাবনীপুর মহল্লায়। তবে তিনি কাজের তাগিদে মাদারীপুরে থাকতেন। কিছুদিন আগে মেয়ে সীমাকে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে ইউছুপের স্ত্রী ও এক ছেলে আছে। ইউছুপের কিশোর ছেলে আশিক রাজমিস্ত্রির কাজ শিখছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউছুপ আলী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পৈতৃক সূত্রে দুই শতক জমি পেয়েছিলেন। মেয়ের বিয়ের জন্য জমিটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পৈতৃক বাড়ির পাশে ইউছুপের স্ত্রী ও ছেলে একটি ভাড়াবাসায় থাকে। মাদারীপুরে থেকে ইউছুপ বাসচালকের সহকারীর কাজ করতেন। ছুটি পেলে বাড়িতে এসে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করে যেতেন।
দুর্ঘটনার দিন বিকেলে পরিবারের লোকজন ইউছুপের মৃত্যুর খবর পান। এরপর গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে লাশ বাড়িতে পৌঁছায়। পরে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে ইউছুপের লাশ দাফন করা হয়।
গতকাল দুপুরে ইউছুপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে নিস্তব্ধতা। টিনের বেড়া দেওয়া ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে ইউছুপ আলীর পরিবার। বাড়ির বারান্দায় মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছেন মেয়ে। পাশেই বসে আছে ইউছুপের ছেলে। কারও মুখে কোনো কথা নেই। সবাই যেন শোকে পাথর।
ইউছুপ আলীর স্ত্রী শাবানা বেগম বলেন, সহায়–সম্বল বলতে তাঁদের কিছুই নেই। স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চলত। শবে বরাতের দিন এসে তিনি কিছু বাজার করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তখন বলছিলেন, রোজার সময় এসে আবার কিছু বাজার করে দিয়ে যাবেন। বলতে বলতে শাবানা কেঁদে ফেললেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তিনি ঠিকই আসলেন, তয় লাশ হয়া। আমি এহন কার কাছে বাজার চাবো।’
ইউছুপ আলীর প্রতিবেশী এম এ আলীম বলেন, ‘ইউছুপ আলী খুবই দরিদ্র একজন মানুষ। তাঁর অকালমৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ থাকল না।’
প্রসঙ্গত, রোববার খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।