ঝোপজঙ্গলের স্থানে এখন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ

রংপুর নগরের দমদমা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ। গত সোমবার তোলাছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর নগরের দমদমা সেতুর পাশে দুই বছর আগে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের চার শিক্ষক ও এক শিক্ষকের স্ত্রীসহ আরও অনেককে এখানে হত্যা করা হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের চারদিকে পাইপ দিয়ে ঘেরা। তবে দর্শনার্থীদের দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না। স্মৃতিস্তম্ভটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ঘাঘট নদ। পাশেই লক্ষ্মণপাড়া। রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক থেকে স্মৃতিস্তম্ভের দূরত্ব প্রায় ২০০ ফুট। সেখানে কাঁচা রাস্তা হেঁটে যেতে হয়। সড়কটি পাকা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

স্মৃতিস্তম্ভটি দেখার সময় সঙ্গে ছিলেন রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম। তিনি একাত্তরের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনেক ছাত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি সেনারা কারমাইকেল কলেজের শিক্ষকদের ধরে নিয়ে এসে এই দমদমা সেতুর পাশে এই স্থানে হত্যা করে। রংপুরের মানুষ শহীদ শিক্ষকদের স্মরণ করে, ভবিষ্যতেও স্মরণ করবে।

সদরুল আলম আরও বলেন, যেখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে, স্থানটি একসময় ছিল ঝোপজঙ্গলে ভরা। একটি বাঁশখেত ছিল। এই স্থানে তাঁদের স্মরণে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারমাইকেল কলেজ শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে ছোট একটি নামফলকের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই সময় স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করেছিলেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। সেখানে প্রতিবছর কলেজের পক্ষ থেকে শহীদ শিক্ষকদের স্মরণে দমদমা বধ্যভূমিতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে আসছেন। সেখানে স্মরণসভাও অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষের দাবি ছিল এখানে সরকারি উদ্যোগে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হোক। সেই দাবি পূরণ হয়েছে।

গণপূর্ত রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে দমদমা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।