পাটগ্রামে বোমা মেশিন দিয়ে আবারও পাথর উত্তোলন 

ছয় বছর পর নিষিদ্ধ বোমা মেশিনের কারবার আবার শুরু হয়েছে। উপজেলায় এখন দুই শতাধিক বোমা মেশিনে বালু ও পাথর তোলা হচ্ছে।

নদীতে ভাসমান স্থাপনা বসিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। গত ৩১ জুলাই পাটগ্রামের কামারের হাট-ঘুণ্টিঘর আঞ্চলিক সড়কের নাঠারবাড়ির গিরিয়া নদীর সেতু ও সড়কসংলগ্ন এলাকায়
প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় আবারও ফিরে এসেছে ‘বোমা মেশিনের’ তাণ্ডব। অবৈধ এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধরলা ও সিঙ্গিমারী নদী থেকে দেদার তোলা হচ্ছে বালু ও পাথর। ২০১৭ সালে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে উপজেলায় বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। ছয় বছর পর সম্প্রতি আবার সেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। 

অবশ্য পাথর উত্তোলনকারীরা এবার কৌশল বদলেছেন। আগে দিনরাত পাথর উত্তোলন চললেও এখন বেশির ভাগ সময় রাতে ভাসমান স্থাপনা বসিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। প্রশাসনের অভিযানের খবর পেয়েই নৌকা নিয়ে ভাসমান স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিন উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দিনের বেলায়ও বোমা মেশিন চলতে দেখা গেছে।

বোমা মেশিন মূলত পাওয়ার পাম্প আর পাইপ দিয়ে তৈরি একটি যন্ত্র। চলার সময় এটি বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ হয় বলে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বোমা মেশিন’। হাইকোর্ট বোমা মেশিন নামের যন্ত্রের ব্যবহারের ওপর ২০০৯ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তখন থেকে উপজেলা প্রশাসন নিষিদ্ধ এ যন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রামে এখন দুই শতাধিক বোমা মেশিনে রাতভর উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ও পাথর। স্থানীয় লোকজন পাথর উত্তোলনকারীদের এ তৎপরতার নাম দিয়েছেন ‘রাতে ভাসা’। নদীতে পাইপ বসিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ছয় সিলিন্ডারযুক্ত ডিজেলচালিত পাম্প ব্যবহার করে পাথর-বালু তোলা হচ্ছে। বোমা মেশিন নামে পরিচিত এ যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে ১০০ থেকে ২০০ ফুট গভীরের মাটি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ভূগর্ভের মাটির স্তর পরিবর্তনের আশঙ্কা দেখা দেয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে ধরলা নদীর মাশানটারী, বানিয়াডাঙ্গী, ডাঙ্গীরপাড়, বেংকান্দা এলাকা ঘুরে বোমা মেশিনে পাথর উত্তোলনের সত্যতা মিলেছে। তবে নদীর দুর্গম স্থানে এসব যন্ত্র বসানো হয়েছে। সেখানে যাওয়া দুরূহ হলেও তীর থেকে দেখা যায়, বোমা মেশিন চলার শব্দও স্পষ্ট কানে আসে। স্থানীয় লোকজন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অভিযান এড়াতেই ধরলা ও সিঙ্গিমারী নদীতে বোমা মেশিন চালাতে রাত ভাসা কৌশল নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাতে দুর্গম স্থানে প্রশাসনের দল পৌঁছাতে পৌঁছাতেই পাথর উত্তোলনকারীরা পাইপ নদীতে ফেলে দিয়ে নৌকায় পাম্প ও যন্ত্রপাতি নিয়ে সটকে পড়ছে। এতে তাদের যন্ত্র রক্ষা পাচ্ছে।

পাথর ব্যবসায়ী সেজে ওই যন্ত্র পরিচালনায় নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, অভিযান থেকে পাথর উত্তোলন যন্ত্র রক্ষা করতেই তাঁরা রাতে ভাসা কৌশল নিয়েছেন। ধরলা ও সিঙ্গিমারী নদীতে অভিযান শুরু হলে বোমা মেশিন হয় তাঁরা নৌকায় নিয়ে সটকে পড়েন, নয়তো বালুর স্তূপে লুকিয়ে রাখেন।

অবশ্য গত সোমবার বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারের হাট-ঘুণ্টিঘর আঞ্চলিক সড়কের নাঠারবাড়ির গিরিয়া নদীর সেতু ও সড়কসংলগ্ন এলাকায় ১০টি বোমা মেশিন দিয়ে দিনে ও রাতে পাথর ও বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এতে সেতু ও সড়ক ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।

পাটগ্রামের ইউএনও নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তবু গত জুন মাসের শেষে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে ছয়টি বোমা মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। এক ব্যক্তিকে আটকসহ ৫০ হাজার টাকা ও আরেক ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

ইউএনও আরও বলেন, যতই কৌশল করুক, রাত হোক আর দিন, অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এসব মেশিন নদী থেকে উচ্ছেদ করে এ উপজেলাকে বোমা মেশিনমুক্ত করা হবে।