রুয়েটের ‘অচলাবস্থা’ নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি

পরীক্ষার দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। গতকাল শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়মিত উপাচার্য নেই প্রায় এক বছর। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। শিক্ষকেরা অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। আর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও ফলাফল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অর্থছাড় না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজও থেমে আছে।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরীক্ষার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ চেয়ে আজ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সেলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে উপাচার্য না থাকায় অচল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রুয়েট। অর্থছাড় হচ্ছে না বলে সব ধরনের উন্নয়নকাজ থেমে আছে। শিক্ষকেরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না, অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বিদেশেও যেতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। ফলাফলও প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সমাধান চেয়ে আজ সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন।

রেজিস্ট্রার আরও বলেন, উপাচার্য নিয়োগের আগে আপাতত এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, যার স্বাক্ষরে অতি জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়। এর আগে ২০১৮ সালে উপাচার্য ছিলেন না। তখন এ দায়িত্ব রেজিস্ট্রারকে দেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না; শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা, সেমিনার–সিম্পোজিয়ামে যোগদানের জন্য বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না; শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি বা এনওসি দেওয়া যাচ্ছে না; চলমান প্রকল্প ব্যয়সহ যাবতীয় রাজস্ব ব্যয় করা যাচ্ছে না এবং প্রশাসনিক সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল অনুষদের ডিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি চলমান প্রকল্পের ব্যয়সহ অন্যান্য রাজস্ব ব্যয়ের বিল–ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ২০১৮ সালের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ের শেষে নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন মো. সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে ২৮ মে পদোন্নতির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। এর পর থেকে একাডেমিক পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তৌহিদ আরিফ খান চৌধুরী সব বিভাগকে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা নিতে না পারার কারণও ব্যাখ্যা করেন। এ অবস্থায় গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সিরিজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন। পরে বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। ২ আগস্টের মধ্যে পরীক্ষার রুটিন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দেওয়া হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলো।