প্রথমবারের মতো কালি জিরা চাষে বাজিমাত

চারটি ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর জমিতে কালিজিরা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। এতে খুশি এই কৃষকেরা।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলে কালো জিরার ভালো ফলন হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলে প্রথমবারের মতো মসলাজাতীয় ফসল কালিজিরা চাষ হয়েছে। এতে ভালো ফলন পেয়েছেন চাষিরা। তা দেখে এ অঞ্চলের অনেক কৃষক আগামীতে কালিজিরা চাষের উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, কালিজিরা ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি ফসল। দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কালিজিরা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সরকারের এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়।

বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগ ‘ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় যমুনার চরাঞ্চলে কালিজিরা চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কয়েকজন কৃষক এই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে কালিজিরা চাষ শুরু করেন। চারটি ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর জমিতে কালিজিরা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। এতে খুশি এই কৃষকেরা।

ওমরপুর গ্রামের কৃষক সৈয়দ আলী বলেন, ‘আগে কখনো কালিজিরা চাষ করিনি। কৃষি বিভাগের পরার্মশে এক বিঘা জমিতে গত কার্তিক মাসে কালিজিরার আবাদ করেছিলাম। দুদিন আগে ফসল তুলেছি। প্রায় চার মণ কালিজিরা পেয়েছি। প্রতি মণ কালিজিরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। চাষে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক লাভবান হয়েছি আমি।’

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কালিজিরা চাষের আগে এসব জমিতে তাঁরা গম আবাদ করতেন। এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ গম পাওয়া যেত। প্রতি মণ গম ১৫ থেকে ১৬ শ টাকা বিক্রি করা যেত। সে হিসেবে কালিজিরা চাষ অনেক বেশি লাভজনক। কৃষক মজিদ মোল্লা বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে কালিজিরা চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। তাঁদের সাফল্য দেখে এখন আরও অনেকেই কালিজিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’

ওমরপুর গ্রামের লাল মিয়া ও ওয়াজেদ মওলা জানান, তাঁরাও আগামীতে কালিজিরা চাষ করবেন। তাঁদের মতো আরও অনেকেই কালিজিরা চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রায় চার মণ কালিজিরা পেয়েছি। প্রতি মণ কালিজিরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। চাষে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক লাভবান হয়েছি আমি
সৈয়দ আলী, ওমরপুর গ্রামের কৃষক

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঔষধি গুণে ভরা অর্থকরি এ ফসলটি যমুনা চরাঞ্চলে ব্যাপক সারা ফেলেছে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা আসছেন কালিজিরার জমি দেখতে। বালু চরে কালিজিরা চাষের সফলতা দেখে তাঁরাও আগামী বছর কালিজিরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

যমুনার চরাঞ্চলের আবহাওয়া কালিজিরা চাষের জন্য উপযোগী উল্লেখ করে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীর জমিগুলোতে কালিজিরার খুব ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে চরাঞ্চলে মৌবাক্স স্থাপনসহ কালিজিরা থেকে মধু আহরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কালিজিরা চাষ সম্প্রসারণ করা হবে।