খোলা ট্রাক, পিকআপ ও বাসের ছাদে ভ্রমণ না করার আহ্বান হাইওয়ে পুলিশ প্রধানের
স্বজনদের সঙ্গে ঈদুল আজহার ছুটি উদ্যাপন করার জন্য অনেকেই আজ বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। অনেকে কম খরচে যাওয়ার জন্য পিকআপ ভ্যান, গবাদিপশুবাহী ট্রাক, খোলা ট্রাক, মালবাহী পরিবহন, বাসের ছাদে যাত্রা করেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করায় ঈদের ছুটিতে অনেক যাত্রী নিহত ও আহত হন। যাত্রীদের প্রতি এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা না করার আহ্বান জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শাহাবুদ্দিন খান।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসে অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এই আহ্বান জানান।। আজ দুপুরে তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘যাত্রীদের কাছে অনুরোধ আপনার ঝুঁকিপূর্ণ অনিরাপদ যাত্রায় শামিল হবেন না৷ পিকআপ, পশুবাহী ট্রাক, খোলা ট্রাক, মালবাহী পরিবহন, বাসের ছাদে যাত্রা করবেন না৷ মনে রাখবেন, সময়ের তুলনায় জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’
অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান আরও বলেন, ‘আমরা এত কষ্ট করে ভিড়ের মধ্যে বাড়ি যাই। কারণ, আমাদের স্বজনেরা চেয়ে আছে। তারা চেয়ে আছে একসঙ্গে ঈদ করার জন্য। তাই আমাদের উচিত হচ্ছে একটু দেরি হলেও সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করা। আপনার অনিরাপদ যাত্রার কারণে দুর্ঘটনায় পড়তে জয়। এ জন্য সারা বছর সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। তবু আপনারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শামিল হন। এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় যাঁরা শামিল হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শাহাবুদ্দিন খান আরও বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে সরকার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে ঈদের এক মাস আগে থেকে মেট্রোপলিটন, জেলা, হাইওয়ে পুলিশসহ বিআরটিসি ও পরিবহনমালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করি। সেখানে ঈদযাত্রা কীভাবে নির্বিঘ্ন করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ঈদযাত্রা নিরাপদ রাখতে পুলিশের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এবারও ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। সাদাপোশাকের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছি। আমরা অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করছি। আশা করছি, এবারও ঈদযাত্রা নিরাপদ হবে।’
গাজীপুরে বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখী মানুষের। মহাসড়কগুলোতে যানজট না থাকলেও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রাসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বেড়েছে। যানবাহনে আপাতত নির্বিঘ্ন যাত্রা হলেও মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে। এদিকে পশুবাহী ট্রাকও অনেক যাতায়াত করছে।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ও চন্দ্রা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজট নেই। তবে যানবাহনের চাপ রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অর্ধশতাধিক বাসের কাউন্টার রয়েছে। এসব কাউন্টারে যাত্রীদের বেশ চাপ দেখা গেছে। কাউন্টারগুলোতে অনেক নারী-পুরুষ বাসের অপেক্ষায় আছেন। আবার অনেকে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত বাসে উঠছেন। সব মিলিয়ে চন্দ্রা এলাকায় ঘরমুখী মানুষের চাপ অনেক বেড়েছে। অপর দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোথাও যানজট দেখা যায়নি। যানজট না থাকলেও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঘরমুখী মানুষের ভিড় রয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অতর্কিত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে দুটি লেন দিয়ে যানবাহন ঢাকার দিকে প্রবেশ করছে আর ঢাকা থেকে বের হতে পারছে বিআরটির দুটিসহ চারটি লেন দিয়ে।
পুলিশ জানায়, গাজীপুরের শিল্পকারখানার ছুটি হলেই মহাসড়কে যানবাহন ও ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আজ বিকেলে ও আগামীকাল শুক্রবার জেলার সব শিল্পকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারখানা ছুটি হলে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনের জন্য মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্বপালন শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি রেকার রাখা হয়েছে। কোনো যানবাহন বিকল হলে যাতে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়।
গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। তবে কারখানা ছুটি হলে কী হয়, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি, আগের মতো চন্দ্রায় আর যানজট হবে না। যানজট নিরসনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।’