জীবদ্দশায় চল্লিশার আয়োজন, আমন্ত্রিত গ্রামের সব মানুষ
বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টানিয়ে চেয়ার-টেবিল পাতা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে ভোজের। গ্রামের প্রায় ৪০০ বাসিন্দাকে দাওয়াত করা হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের একে একে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে গতকাল সোমবার দুপুরে এই আয়োজন করা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা মারফত আলী (৭০) ওই ভোজের আয়োজন করেন। জীবিত থাকতেই তাঁর চল্লিশা (চেহলাম) আয়োজন করেছেন বলে তিনি জানান।
কারো মৃত্যুর ৪০ দিন পর তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ, কোরআন খতম, দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা যা চল্লিশা (চেহলাম) নামে পরিচিত। অনুষ্ঠান শেষে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য ভোজের ব্যবস্থা থাকে। মৃত্যুর আগেই মারফত আলীর ওই আয়োজন নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
এ সম্পর্কে মারফত আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও ফসলি জমিজমা রয়েছে। দুই সংসারে ছয় সন্তান রয়েছে। তিনি মারা গেলে সন্তানেরা গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে কিনা তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল। তাই তিনি জীবদ্দশায় এই আয়োজন করেছেন। তিনি গ্রামের সবার বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন। সবাই এই আয়োজন অংশ নেওয়ায় তিনি খুশি।
গতকাল দুপুরে মারফত আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে চেয়ার-টেবিলে বাসে গ্রামের লোকজন খাবার খাচ্ছেন। মারফত আলীর ছেলেমেয়ে, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা অতিথিদের খাবার পরিবেশন করছেন। মাঝেমধ্যে মারফত আলীকেও অতিথিদের খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মারফত আলীর মেয়ে রেনুয়ারা বেগম। তিনি জানান, এই আয়োজন উপলক্ষে তাঁর বাবা শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে দাওয়াত দিয়ে এনেছেন। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়েরা সামর্থ্য অনুযায়ী এই অনুষ্ঠান অবশ্যই আয়োজন করতেন। কিন্তু বাবা মৃত্যুর আগে মানুষকে খাওয়াবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা ভাইবোনেরা বাবার ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
ওই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক (৬৫)। তিনি বলেন, সামর্থ্যবান পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে ৪০ দিন পর মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। মারফত আলী গ্রামের সচ্ছল কৃষক। তাঁর ইচ্ছা হয়েছে জীবদ্দশায় চল্লিশার আয়োজন করে গ্রামবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর। তিনি সেটা করেছেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে খুশি গ্রামের আবদুর রশিদ (৬৫), আবদুর রেজাক (৬০) ও আবদুল কদ্দুছ মিয়া (৬৫)। তাঁরা জানান, তাঁরা তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়েছেন। আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখেননি মারফত আলী। গরিব বলে তাঁদের অবহেলা করা হয়নি।