এক হাত থেকেও অচল, পায়ে লিখেই চলছে সোনিয়ার লেখাপড়া

অদম্য সোনিয়া আক্তার পা দিয়ে লিখে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেছবি: সংগৃহীত

জন্ম থেকেই সোনিয়ার ডান হাত নেই। বাঁ হাত বোধশক্তিহীন। অবশ। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা। গত বছর মোটামুটি ভালো ফল নিয়ে এসএসসি পাস করে এখন স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। পড়ালেখার পাশাপাশি পা দিয়ে সংসারের টুকিটাকি কাজও করছে সে।

সোনিয়া আক্তারের (১৭) বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পদুয়া গ্রামে। ওই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহিন প্রধানের মেয়ে সে। ২০২৪ সালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার শ্রীরায়েরচর এলাকার সিরাজুল ইসলাম মেমোরিয়াল হাইস্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ পেয়ে এসএসসি পাস করে সোনিয়া। এখন মতলব উত্তরের নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগে পড়ছে।

গতকাল শনিবার সকালে সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। জানায়, তার বাবা টুকটাক ব্যবসা করেন। আয়-রোজগার তেমন নেই। সংসারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। জন্মের পর থেকে তার ডান হাত নেই। বাঁ হাত অবশ। তবে পা দুটি সচল। এত সব সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শৈশব থেকেই মনস্থির করেন, যত কষ্ট হোক লেখাপড়া করে কিছু একটা করবে। সংসারের টানাপোড়েন ঘোচাবে। সেই লক্ষ্যে পা দিয়ে লিখে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে।

সোনিয়া প্রথম আলোকে বলে, এসএসসি পাসের পর গত বছর মতলব উত্তরের নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছে। পা দিয়ে লিখে কয়েক দিন আগে একাদশ শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। বাড়ি থেকে তার কলেজের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। অটোরিকশায় কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়। দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রতিদিন কলেজে যেতে পারে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ও পরীক্ষায় নিয়মিত অংশ নেয়। পা দিয়ে লেখার কাজ ছাড়াও বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করে।

‘যত সমস্যা ও কষ্টই হোক, আমার স্বপ্ন, ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ কইরা কিছু একটা করুম। স্বাবলম্বী হমু। কারও করুণা নিয়া বাঁচুম না। হাত কাজ না করুক, পায়ের ও মনের শক্তি দিয়েই এগিয়ে যামু। সংসারের অভাব ঘোচাতে সাহায্য করুম। প্রমাণ করুম, ইচ্ছা থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়।’ এভাবেই নিজের অদম্য মনোভাব ও ইচ্ছাশক্তির কথা জানায় সোনিয়া আক্তার।

সোনিয়ার বাবা শাহিন প্রধান প্রথম আলোকে জানান, তাঁর অভাবের সংসার। মেয়েটি প্রতিবন্ধী; তবু লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ। বাড়ি থেকে কষ্ট করে অনেক দূরে কলেজে যায়। পা দিয়ে লিখে লেখাপড়া করে। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটির এত আগ্রহ দেখে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। আর্থিক সমস্যার কারণে কতটুকু মেয়েকে পড়াতে পারবেন জানেন না।

নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তাঁর কলেজের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে যেভাবে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে, লেখাপড়া চালাচ্ছে, তা তার অদম্য ও লড়াকু মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সে হার না মানা জীবনযোদ্ধা। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।