পদ্মা রেলসেতুর দুটি স্টেশনের ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের প্রথম স্টেশন পদ্মা স্টেশনছবি: সংগৃহীত

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে রেলপথ চালু হওয়ায় যোগাযোগের নতুন দুয়ার খুলে গেছে। তবে পদ্মা সেতুর পর দুটি স্টেশনের ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই স্টেশন দুটি হলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় অবস্থিত পদ্মা স্টেশন ও শিবচর স্টেশন। স্থানীয় মানুষের মতে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই স্টেশনগুলোয় যেতে অতিরিক্ত সময়, খরচ ও ভোগান্তি হবে। এর চেয়ে সড়কপথে বাসে করে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানো যাবে।

শরীয়তপুরের নিরাপদ সড়ক ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী পলাশ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জেলার ওপর দিয়ে রেলপথ নেওয়া হলেও শরীয়তপুরের মানুষের রেলেভ্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে হয়তো স্টেশন নির্মাণ করা হয়নি। পদ্মা সেতুর কাছে গিয়ে বাস থেকে নেমে উল্টো পথে ৪ কিলোমিটার পথ গিয়ে ট্রেনে চড়ে কেউ নিশ্চয়ই ঢাকায় যাবেন না। আমাদের জেলার মানুষেরা অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকাকেন্দ্রিক। সেতু চালু হওয়ার পর অনেকে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। ট্রেনের স্টেশন দূরে হওয়ার কারণে সড়কপথে বাসের ওপরই নির্ভর করতে হবে।’

আরও পড়ুন

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করেন। শিগগিরই নতুন এ রেলপথে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এখন ঢাকা-ভাঙ্গা পথে রেল চলাচল করবে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা স্টেশনের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। শরীয়তপুর প্রান্তে পদ্মা সেতুর পর ৪ কিলোমিটার দূরে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এর সাড়ে ১০ কিলোমিটার পর শিবচরের দৌলতপুর এলাকায় শিবচর স্টেশনের অবস্থান।

শরীয়তপুরের বাসিন্দাদের ট্রেনে উঠতে হবে পদ্মা স্টেশন থেকে। এটির অবস্থান শরীয়তপুরে প্রবেশের পথ নাওডোবা থেকে চার কিলোমিটার দূরে শিবচরের কুতুবপুরে। এটি ঢাকার দিক থেকে উল্টো পথে। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি সার্ভিস সড়ক তৈরি করা হয়েছে। আর শিবচর স্টেশনটি পাচ্চর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সেখানেও যেতে হবে সার্ভিস সড়ক ধরে।

আরও পড়ুন

শরীয়তপুরের বাসিন্দাদের অনেকে মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঢাকায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে স্টেশন দুটি খুব বেশি কাজে আসবে না। এর চেয়ে সড়কপথে বাসে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। তবে নতুন এই রেলপথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে যাতায়াত সহজ ও আরামদায়ক হবে।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকার বাসিন্দা রিমন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকা থেকে নতুন রেলপথের পদ্মা স্টেশন ও শিবচর স্টেশনের দূরত্ব ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। ওই দুই স্টেশনে যাওয়ার সরাসরি কোনো সড়ক নেই। পাচ্চর গিয়ে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস সড়ক দিয়ে স্টেশনে যেতে হবে। এতে অনেক সময় ও খরচ হবে; পাশাপাশি দুর্ভোগ হবে। এভাবে ট্রেনে করে হয়তো আমাদের ঢাকা যাওয়া হবে না। কখনো খুলনা-যশোর বা উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ওই পথে ট্রেনে যেতে পারব।’

আরও পড়ুন

জাজিরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীয়তপুরের মানুষদের ওই রেলপথে সংযুক্ত করার জন্য পদ্মা স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ভৌগোলিক কারণে একটু দূরে শিবচর এলাকায় তা নির্মাণ করতে হয়েছে। এখন নাওডোবার পদ্মা সেতুর সার্ভিস সড়ক ব্যবহার করেই ওই স্টেশনে যাতায়াত করতে হবে। আমরা আশাবাদী, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণের সব জেলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে আসবে।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পুরো রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর দিয়ে ট্রেন খুলনায় যেতে পারবে। একইভাবে রাজবাড়ী হয়ে উত্তরবঙ্গের পথেও ট্রেন চলতে পারবে। ভবিষ্যতে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।