যৌতুকের দাবিতে নারীকে নির্যাতন, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার করল পুলিশ

নারী নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে এক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে ওই নারীকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁকে আহত অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম সুইটি বেগম (২২)। তাঁর স্বামী মোস্তাফিজার রহমানসহ (২৭) পরিবারের সদস্যরা ওই নির্যাতন চালিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় নীলফামারীর ডিমলা সদর ইউনিয়নের পঁচারহাট গ্রামের মজিদুল ইসলামের মেয়ে সুইটি বেগমের। তাঁদের দুই বছর বয়সের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।

সুইটির বাবা মজিদুল ইসলাম বলেন, বিয়ের সময় ও পরবর্তীকালে জামাতাকে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য পর্যায়ক্রমে ছয় লাখ টাকা ও দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র উপহার দিয়েছিলেন। বিদেশে যাওয়ার সময়ও দেওয়া হয়েছিল আরও দুই লাখ টাকা।

সুইটি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর জানতে পারেন তাঁর স্বামী নেশায় আসক্ত। তিনি এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছিলেন। তবুও তিনি সংসার করতে থাকেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মোস্তাফিজার রহমান ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে নির্যাতন করতে থাকেন মোস্তাফিজারের বোন মরিয়ম বেগম, তাঁর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সুইটি বলেন, বিয়ের কয়েক মাস পর মালয়েশিয়া চলে যান মোস্তাফিজার। ৬ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে রাতে বাড়িতে ফিরে এসেই যৌতুকের ১০ লাখ টাকা এনেছি কি না, তা জানতে চান। একপর্যায়ে ওই দিন রাতেই তাঁকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করেন স্বামী। একই কারণে গতকাল সকালে আবারও গলা চেপে ধরে মারধর করে ঘরে আটকে রাখেন। কোনো উপায় না পেয়ে ৯৯৯ ফোন দেন তিনি। এরপর বদরগঞ্জ থানা–পুলিশ গতকাল বিকেলে স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মোছা. তাবাসসুম বলেন, সুইটির শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুইটির স্বামী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়া থেকে আসার পর স্ত্রী আমার কাছে আসেনি। এই নিয়ে খানিকটা বাক্‌বিতণ্ডা হয়েছে। আমি তাকে একটু থাপ্পড় ছাড়া আর কিছুই করিনি। যৌতুকের দাবিতে মারপিট করার অভিযোগ সঠিক নয়।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ওই গৃহবধূকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। শুনেছেন, তাঁকে মারপিট করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।