ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবহন নেতাকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

পরিবহন নেতাকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক পরিবহন নেতাকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। গতকাল রাতে পরিবহনশ্রমিকেরা শহরের ভাদুঘর আন্তজেলা বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরিবহনশ্রমিকদের দাবি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আ. কুদ্‌দূস আন্তজেলা বাস-মালিক সমিতির লাইন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে থাপ্পড় মেরেছেন। এ ঘটনায় আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে পরিবহন ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষের বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করেন পৌরসভার সিইও।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ভাদুঘর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৭ দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। মেলা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।

স্থানীয় লোকজন, পরিবহন ও শ্রমিক নেতারা বলেন, মেলার প্রধান ফটকের পাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া দেওয়ায় টার্মিনালে বাস পার্ক করতে অসুবিধা হচ্ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখ থেকে প্রায় ২০ হাত দূরে একটি বাস কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। এতে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় মেলার প্রধান ফটকের বেড়ার একাংশ খুলে টার্মিনালে বাস ঢুকানোর জন্য সিইও কুদ্‌দূসের সঙ্গে কথা বলতে যান জাকির হোসেন। কুদ্‌দূস এ বিষয় নিয়ে পৌরসভার কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে কমিশনার বিজয় মেলার মঞ্চের কাছে থাকায় জাকির তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি বলে দাবি করেন। এর মধ্যে এক শ্রমিক ওই বাঁশ খুলে টার্মিনালের ভেতরে বাস ঢুকান। জাকির হোসেন দাবি করেন, এ সময় কুদ্‌দূস ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ডেকে চর–থাপ্পড় মারেন।

এ ঘটনায় টার্মিনালের পরিবহন ও শ্রমিক নেতা–কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের দুই পাশে যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় শ্রমিকেরা সিইও কুদ্‌দূসের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন।

এ বিষয়ে জানতে সিইও আ. কুদ্‌দূসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে উভয়পক্ষ নিয়ে আলোচনায় বসেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। সেখানে পৌরসভার সিইও কুদ্‌দূস, পরিবহন নেতা জাকিরসহ অন্য নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আ. কুদ্‌দূস গতকাল রাতের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ওই সভায় বাস টার্মিনালের মধ্যে বাঁশ স্থাপনের জায়গা উভয় পক্ষের জন্যই নির্দিষ্ট করে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রণয় চাকমা।

সভায় থাকা জেলা বাস–মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে বাঁশ সরানো নিয়ে আ. কুদ্‌দূসের সঙ্গে জাকির মিয়ার কথা–কাটাকাটি হয়। বিষয়টির জন্য পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি থাপ্পড়ের কথা অস্বীকার করেছেন।

জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে ধরে সরি বলেছেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা। আর বাস টার্মিনালে থাকা বাঁশ সরিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।’

জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়েছে। গতকাল রাতের ঘটনার জন্য উভয়পক্ষ একে অপরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বাস টার্মিনালে বাঁশের বেড়ার বিষয়টি উভয় পক্ষের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। মেলায় প্রবেশের জন্য রাস্তা যেমন দরকার, আবার বাস রাখার জন্য জায়গাও দরকার।