৩১ ভারতীয় বন্দীর প্রত্যাবাসন কবে

ভারতীয় এই বন্দীদের পরিবারের স্বজনেরা তাঁদের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু ভারত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তাঁরা নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না।

  • মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাঁদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। ফলে অসহায়ের মতো  তাঁদেরকে কারাগারে আটক থাকতে হচ্ছে।

  • বন্দীদের মধ্যে মধ্যে চার থেকে পাঁচজন বাংলা ভাষা বলতে ও বুঝতে পারেন। অন্যদের ভাষা কেউ বুঝতে পারেন না। যে কারণে অত্যন্ত মানবেতর দিন কাটছে তাঁদের।

কারাগারপ্রতীকী ছবি

ভারতীয় নাগরিক রাজ কুমার (৪৫) আট বছর আগে বিনা পাসপোর্টে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আটকের পর তাঁর বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রায়পুর বলে জানান। অনুপ্রবেশের অপরাধে যশোরের আদালত তাঁকে ৫ দিনের কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। ২০১৪ সালের ৩ মে তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু আট বছরেও তাঁর মুক্তি মেলেনি।

শুধু রাজ কুমারের এমন দুর্গতি হয়েছে, তা নয়। তাঁর মতো আরও ৩০ ভারতীয় নাগরিকের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। দীর্ঘদিন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তাঁরা। এতে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। ভারতীয় এই বন্দীদের পরিবারের স্বজনেরা তাঁদের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু ভারত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তাঁরা নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া ৩১ ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক আগেই অনুমোদন দিয়েছে। তাঁদের প্রত্যাবাসনের জন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়কের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএসএফ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো আছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।’

যশোর কারাগার সূত্রে জানা যায়, এই ৩১ জন ভারতীয় বন্দীর মধ্যে প্রায় সবাই বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের দায়ে এ দেশের পুলিশের হাতে আটক হন। পরে আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বন্দীদের বেশির ভাগ লেখাপড়া জানেন না। তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। যে কারণে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কী করতে হবে, তাঁদের পরিবারের লোকজনের জানা নেই। মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও এখনো কেউ তাঁদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। ফলে অসহায়ের মতো তাঁদেরকে কারাগারে আটক থাকতে হচ্ছে।

এই বন্দীদের মধ্যে মধ্যে চার থেকে পাঁচজন বাংলা ভাষা বলতে ও বুঝতে পারেন। অন্যদের ভাষা কেউ বুঝতে পারেন না। যে কারণে অত্যন্ত মানবেতর দিন কাটছে তাঁদের। তাঁদের মুক্তি দিতে না পেরে কারা কর্তৃপক্ষও বিপাকে রয়েছে। তাঁদের থাকা, খাওয়া, পোশাক, চিকিৎসাসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটাতে সরকারের অর্থেরও অপচয় হচ্ছে। পরিবারে ফেরার জন্য তাঁদের আকুতি পৌঁছাচ্ছে না তাঁদের নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের কানে। তাঁরা আবার তাঁদের স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চান।

যশোর জেলা লিগ্যাল এইড সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। যশোরের মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মুক্তিপ্রাপ্ত ওই বন্দীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৬ নভেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ভারতীয় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তাঁরা শিগগিরই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।