অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে খননযন্ত্রের অবস্থান সঠিক জায়গায় পাওয়া যায়নি। যেখান থেকে বালু কাটার কথা সেখানে কাটা হচ্ছিল না। তবে পাউবো থেকে খাল বা নদী খননের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
১১ মার্চ সরেজমিনে দেখা গেছে, মরা নদীর খালের মুখ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট দূরত্বে পশ্চিমদিকের মেঘনা নদীতে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। বালু তুলে স্টিলের বড় ইঞ্জিনের নৌকায় ভরা হচ্ছিল। সে সময় অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আবু তালেব বলেন, ‘মরা নদীর খাল কাটার জন্য ইজারা পাইছি। আমরা সরকারের কাছে ১০ লাখ টেহা জমা দিছি। টিএনও (সরাইলের ইউএনও) সাবটেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দিছে। কীভাবে দিছে আপনারা টিএনও অফিসে গেলে জানতে পারবেন।’ তবে সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, খালের মুখের অংশ কাটার অনুমতি এনেছেন। টাকা দিয়ে ইজারার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। গতকাল বুধবারও দেখা যায়, বালু উত্তোলন চলছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, বরইচারা, কাকরিয়া ও চরকাকরিয়া অংশে বরইচারা, কাকরিয়া, চরকাকরিয়া, রাজাপুর ও রানিদিয়া গ্রামের অনেক কৃষকের ফসলি জমি রয়েছে নদীর পাড়ে। এসব ফসলি জমিতে কৃষকেরা সারা বছর বাদাম, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, শর্ষে, ক্ষীরা, ধান চাষ করেন। বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বরইচারা, কাকরিয়া ও চরকাকরিয়ার দেড় হাজার একর ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ৩ মার্চ সন্ধ্যায় অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল বাশারের বাড়িতে সাবেক ইউপি সদস্য সুন্দর আলীর সভাপতিত্বে বালু উত্তোলন বন্ধে গ্রামবাসী সভা করেন। সুন্দর আলী বলেন, ‘হেরা খাল কাটার অনুমোদন আনছে। কিন্তু গাঙের (নদী) মইধ্যে ড্রেজার লাগাইছে। গাঙ কাটলে চরকাকরিয়া ও রাজাপুরের চরটা ভাইঙ্গা যাইব।’
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আল হাসান বলেন, তিনি আড়াই লাখ টাকায় দেড় মাস আগে দরপত্রের মাধ্যমে খালের মুখ খননের ইজারা পান। দুই মাসের জন্য (বৈশাখ মাস শুরু হওয়ার একদিন আগপর্যন্ত) ইজারা পেয়েছেন। কিন্তু খালের মুখে ঢুকতে হলে দূর থেকে কেটে আসতে হবে। কারণ, সামনে শুকনো। তাই বালু উত্তোলন করে সরিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই খালের মুখ কাটা হবে। উত্তোলন করা বালু কী করা হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাঁর নৌকা আছে, তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, সেচ ও নৌযান চলাচলের জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে খালের মুখের অংশে ১০০ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি, বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। গত সোমবার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট দূরত্বে খননযন্ত্র পেয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।