বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে ভবিষ্যতেও এক নম্বরে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র: পিটার হাস
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়ে রাষ্ট্রদূত এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পিটার হাস বলেন, জ্বালানির মূল্য ও সরবরাহের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি যে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশ তা মোকাবিলা করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রচলিত অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় অর্ধেক প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চাহিদ অনুযায়ী প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা বাংলাদেশ সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আয়তনে বাংলাদেশ ছোট হলেও জনসংখ্যায় পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম। এ দেশের অর্থনীতিও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অবস্থানগত জায়গা থেকেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো যুগোপযোগী করার মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আশাবাদী। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বর যুক্তরাষ্ট্র। ভবিষ্যতেও বিনিয়োগের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে তাঁরা এক নম্বরই থাকবেন।
এ সময় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলী, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা ও জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী দীপেশ নন্দা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে পিটার হাস বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে তাঁকে প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সামাজিক ও পরিবেশগত আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ পুনর্বাসন ও উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরপর পিটার হাস প্রকল্পটি সরেজমিন ঘুরে দেখেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানের প্রশংসা করেন।
কেন্দ্রটিতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে নাফিজ সরাফাত বলেন, প্রকল্পটি থেকে সমপরিমাণ গ্যাস দিয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এতে একদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় কমবে, অন্যদিকে অন্যান্য কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় কম কার্বন নিঃসরণ হবে। কেন্দ্রটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। কমদামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে শীর্ষস্থান দখল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে উদ্যোক্তাদের ইক্যুইটি বিনিয়োগ ২৫ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিই-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৭৫ শতাংশ বহন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে টার্ন-কি ভিত্তিতে ইপিসি বা ঠিকাদারি চুক্তিতে সই করে প্রজেক্ট কোম্পানি। এ ছাড়া জিই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।