মুন্সিগঞ্জে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, জমি অধিগ্রহণে সময় বেশি লেগেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও জমি ভরাটে গাফিলতি করেছে।

কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কাজ শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এখনো শেষ হয়নি মাটি ভরাটের কাজ। গতকাল দুপুরে প্রকল্প এলাকায়
প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমিতে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কাজ চলছে ধীরগতিতে। পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ। এরই মধ্যে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাসায়নিক পণ্যের ছোট-বড় অসংখ্য গুদাম রয়েছে। পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জেও গড়ে উঠছে এমন অনেক গুদাম। এসবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর মধ্যে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে একটি গুদামে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক থেকে অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়।

সরকার প্রকল্প হাতে নিল। মেয়াদও একাধিকবার শেষ হলো, ঠিকাদার মাটি ভরাটের কাজটাও শেষ করেননি।
শফিকুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন

যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা এসব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের তুলসীখালি চিত্রকোট ও কামারকান্দা এলাকার ৩১০ একর জায়গায় বিসিক কেমিক্যাল শিল্প পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়। ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে নানা সমস্যায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পার্কের ভরাট করা বালু সমান্তরাল করার জন্য আনা পাঁচ-ছয়টি খননযন্ত্র খালি জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। মাঠে চরানো হচ্ছে গবাদিপশু। এখনো অনেক জায়গা ভরাট করা হয়নি। একটি অংশে ভরাটকাজের জন্য ড্রেজারের পাইপ বসানো রয়েছে। পার্কের পাশে ধলেশ্বরী নদীতে রয়েছে কয়েকটি ড্রেজার।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার দুর্ঘটনা রোধ ও পরিবেশবান্ধব একটি জায়গায় আমাদের ব্যবসা স্থানান্তর করতে চেয়েছে। আমরাও চেয়েছি আমাদের সব কটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে থাকুক। সেখানে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রকল্প হাতে নিল। মেয়াদও একাধিকবার শেষ হলো, ঠিকাদার মাটি ভরাটের কাজটাও শেষ করেননি।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মোট ভৌত অগ্রগতি ৫৭ ভাগ। মাটি ভরাটকাজ শেষ হয়েছে ৭৫ ভাগ। সীমানা দেয়ালের মাটি ও পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। ২ হাজার ৮০০টি বাউন্ডারি পাইলের মধ্যে ১ হাজার ৫০০টি হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে দেয়ালের কাজও শেষ হবে। এরপরে ফায়ার স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি, প্রকল্পের প্রশাসনিক ভবনের কাজ হবে।

প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জমি অধিগ্রহণে সময় বেশি লেগেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও ধীরগতিতে জমি ভরাট করে। এ জন্য দুই দফা মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। এরপরও কাজ শেষ হয়ে যেত, কয়েক মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তাদের খরচ বেড়ে গেছে, এ জন্য তারা আর এ কাজ করবে না। এ কারণে মাটি ভরাট এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাদের জরিমানার আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে মাটি ভরাটের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালকের দাবি, আগামী অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এরপর ব্যবসায়ীদের তাঁদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রকল্পের ভেতরের স্থাপনার কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কাজের ধীরগতি নিয়ে হতাশা স্থানীয় লোকজনেরও। গোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা মুক্তার হোসেন বলেন, ‘রাসায়নিক পার্কের জন্য আমাদের বাপ-দাদার জমি দিলাম। পাঁচ বছর পার হয়ে গেল, এখনো মাটি ভরাটকাজ শেষ হয়নি। আমরা চাই দ্রুত রাসায়নিক পার্কটি এখানে স্থানান্তর হোক। এতে আমাদের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জীবনযাত্রার মান বাড়বে।’