মোজাম্মেল এখনো কোনো কাজ করতে পারেন না

২০০৪ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় কয়েক শ নেতা–কর্মী আহত হন। তাঁদের একজন গোয়ালন্দের মোজাম্মেল হোসেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের মোজাম্মেল হোসেন
সংগৃহীত

মোজাম্মেল হোসেনের শরীরে বিভিন্ন স্থানে এখনো স্প্লিন্টার আছে। কান, মাথা ও পায়ে প্রায়ই প্রচণ্ড ব্যথা হয়। শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়া এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেও তাঁর কষ্ট হয়। শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

মোজাম্মেল হোসেন ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন। এখনো তিনি সেই দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। সেদিনের কথা মনে পড়লে তিনি এখনো ভয়ে আঁতকে ওঠেন।

মোজাম্মেল হোসেন গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামের আবদুল মান্নান ব্যাপারীর ছেলে। মা–বাবা, স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর পরিবার। তিনি গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক।

১৯ বছর আগের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিভীষিকাময় দিন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গত শনিবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল ঢাকায় গিয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। ঢাকার খিলগাঁও গোড়ান বাজার ঈদগাহ মসজিদসংলগ্ন কাজী বাড়ির মেসে থাকতেন। ছোটবেলা থেকে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসতেন বলে মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

সেই দিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে মোজাম্মেল হোসেনের। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে তিনিসহ তাঁর মেসের ১০-১২ জন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যান। বেলা তিনটার দিকে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ দলীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা করেন। যখন সভাস্থলে পৌঁছান তখন শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

ভিড় ঠেলে তিনি শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সেই ট্রাকের কাছাকাছি পৌঁছান। প্রায় ১৫ মিনিট থাকার পর হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরে অনুভব করেন ডান কানে হাত দিয়ে দেখেন রক্ত ঝরছে। পরনের গেঞ্জি খুলে রক্ত মুছতে মুছতে কষ্টে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে স্টেডিয়ামের সামনে সড়কে পড়ে যান।

এ সময় কয়েকজন ধরে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে মোজাম্মেল হোসেন তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন দিন থাকার পর তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে এক দিন থাকার পর তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। প্রায় এক মাস হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে।