‘হাওয়াই মিঠাই, তাহেরের হাওয়াই মিঠাই’ শুনে ছুটে আসে শিশু-কিশোরেরা
কাঁধে হ্যান্ডমাইক ঝুলিয়ে সাইকেলে ছুটছেন এক বৃদ্ধ। মাঝেমধ্যে হ্যান্ডমাইকে সুরে সুরে বলছেন, ‘হাওয়াই মিঠাই, তাহেরের হাওয়াই মিঠাই।’ এমন হাঁকডাক শুনে শিশু-কিশোরেরা ছুটে আসছে তাঁর কাছে। তিনি যন্ত্র ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ তৈরি করে দিচ্ছেন হাওয়াই মিঠাই।
৭০ বছর বয়সী আবু তাহেরের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বড় বিহানালী ইউনিয়নের মুরারিপাড়া গ্রামে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে আসছেন তিনি। তিন সদস্যের পরিবার চালাতে ছুটে চলতে হয় তাঁকে। কিছুদিন আগে রোজগার কমে গিয়েছিল। পরে হ্যান্ডমাইকে সুরে সুরে পণ্য বিক্রির প্রচার শুরু করেন। এতে ভালো সাড়া পেয়েছেন।
আবু তাহের বলেন, একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও বয়স বাড়ার কারণে আর পারেন না। তাঁর চাহিদাও কমে যায় দিনমজুর হিসেবে। অন্যের কাছে হাত না পেতে হাওয়াই মিঠাই বিক্রির কাজ শুরু করেছেন। ঘাড়ে টিনের বাক্স নিয়ে হেঁটে হেঁটে হাওয়াই মিঠাই ফেরি করতেন। কিছুদিন আগে একটি পুরোনো সাইকেল এবং হাওয়াই মিঠাই বানানো যন্ত্র কিনেছেন। সাইকেলের পেছনে যন্ত্রটি বেঁধে ছুটছেন গ্রাম থেকে গ্রামে কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নিজ এলাকা ছাড়াও পাশের আত্রাই উপজেলাতেও হাওয়াই মিঠাই ফেরি করেন।
হাওয়াই মিঠাই বিক্রির জন্য আবু তাহেরকে গলা ছেড়ে হাঁকডাক দিয়ে শিশু-কিশোরদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হয়। বয়সের ভারে আগের মতো গলারও জোর নেই। স্থানীয় বাসিন্দা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সম্প্রতি নতুন একটি হ্যান্ডমাইক আবু তাহেরকে উপহার দিয়েছেন। সেই উপহার পেয়ে এখন হাঁকডাক দিতে সুবিধা হয়েছে তাঁর। এতে তিনি সহজেই শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। বিক্রিও আগের চেয়ে বেড়েছে।
আবু তাহের বলেন, আগে বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হলেও এখন তা বেড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর তা দিয়েই চলছে তাঁর পরিবার।
স্থানীয় বড় বিহানালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেকেন্দার আলী বলেন, আবু তাহের একজন সংগ্রামী লোক। তিনি এই বয়সেও নিজের উপার্জনে চলছেন। অন্যের কাছে হাত পাতেন না।