সোয়েটার কারখানার কর্মী এখন বাদাম বিক্রেতা

সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় বাদাম–ছোলা বিক্রি করেন মো. কাবিরাজ
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক বছর আগেও মো. কাবিরাজ (৪৫) ঢাকার একটি সোয়েটার কারখানার ডিজাইন বিভাগে কাজ করতেন। করোনা আর যন্ত্রের কারণে এখন তিনি কাজ হারিয়ে বাদাম বিক্রেতা হয়ে গেছেন। দুই বছর ধরে তিনি সিলেটে পথেঘাটে বাদাম বিক্রি করছেন। বাদাম বিক্রি করেই তিনি এখন সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন।

মো. কাবিরাজের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাইজপুর গ্রামে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়েই চলছে সংসার। পরিবারের সদস্যরা থাকেন কিশোরগঞ্জে। তিনি থাকেন সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকায়।

সম্প্রতি নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় কথা হয় কাবিরাজের সঙ্গে। ঠেলায় করে তিনি বাদাম, ছোলা ও বুট বিক্রি করছিলেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি ঢাকার বিমানবন্দর ও গাজীপুর এলাকার দুটি সোয়েটার তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছেন। বেতন পেতেন ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে ২০২০ সালের প্রথম দিকে কারখানাগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্র যোগ হয়। শুরু হয় কর্মী ছাঁটাই। এখন ফ্যাক্টরিগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে সোয়েটার তৈরি করা হয়। এতে কাজ হারিয়েছেন তিনি। অন্য ফ্যাক্টরিগুলোতে ঘুরেও আর কাজ পাননি। নতুন যন্ত্র দিয়ে কাজ শিখলেও আগের মতো আর মজুরি পাবেন না। এ জন্য অনেকটা ক্ষোভের বশে তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।

কাবিরাজ বলেন, নতুন যন্ত্রে কাজ শিখলে ফ্যাক্টরির মালিকেরা নতুন কর্মী হিসেবে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেতন দিতেন। কিন্তু তিনি আগে বেতন-ভাতা পেয়েছেন ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। নতুন কর্মী হিসেবে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ওই অবস্থানে পৌঁছেছিলেন। আবার কাজ শিখে এমন অবস্থায় যেতে সময় লাগবে। এ জন্য আর মনে সায় দিচ্ছিল না। অনেক চিন্তাভাবনা করে তিনি সিলেটে চলে যান। বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখন তাঁর পরিবার চলে বাদাম-ছোলা-বুট বিক্রির টাকায়।

মো. কাবিরাজ বলেন, ‘প্রতিদিনই ঠেলা নিয়ে বের হই। আগের রাতে ও সকালে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। আবার কখনো বিকেলের দিকে বের হই। সারা দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করলে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বাঁচে। সেটি দিয়েই নিজে চলি। সংসারের খরচ চালাই। প্রায় দুই বছর ধরে এভাবেই চলছে জীবন। কিছু টাকা জমিয়ে বাড়িতে মুদিদোকান দেওয়ার ইচ্ছা আছে।’